ভ্যাকসিন থেকে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনও প্রমাণ নেই: অ্যাস্ট্রাজেনেকা

রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থেকে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কিছু দেশে সম্প্রতি স্থগিত করা হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।
তবে ব্রিটিশ-সুইস মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগের বিরোধিতা করেছে। শুক্রবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির মত কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, "বিভিন্ন বয়স, দল, লিঙ্গ, ব্যাচ বা দেশভেদে আমাদের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ১০ মিলিয়ন লোকের যে তথ্য ও রেকর্ড রয়েছে, সেখানে ধমনী বা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা রক্তপ্রবাহ আটকে যাবার মত কোন প্রমাণ নেই"।
"শুধু তাই নয়, যাদের ভেতর এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে, তাদের সংখ্যা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম"।
ইউরোপীয় ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রকেরাও পৃথক পৃথকভাবে জানিয়েছেন যে, ভ্যাকসিন এবং রক্তের জমাট বাঁধার মধ্যে কোন যোগসূত্র এখনো নিশ্চিত করা যায় নি। ফলে দেশগুলোর উচিত টিকাদান চালিয়ে যাওয়া।
ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশ এই ভ্যাকসিনের ব্যবহার স্থগিত করার পরে বৃহস্পতিবার প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয় থাইল্যান্ড।
দেশটির ভ্যাকসিন কমিটির সিনিয়র সদস্য পিয়াসাকল সাকলসাতায়াডর্ন বলেন, "এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের তাড়াহুড়ো করার কোন অর্থ হয় না।"
ডেনমার্ক সর্বপ্রথম দেশ যারা সাবধানতা অবলম্বনমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ১৪ দিন এ টিকাপ্রদান স্থগিতের ঘোষণা দেয়। কয়েকজন টিকাগ্রহীতার দেহে রক্ত জমাট বাঁধার খবর আসার প্রতিক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।
নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডও ডেনমার্ককে শীঘ্র অনুসরণ করে। যদিও নরওয়েজিয়ান পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট বলেছে, দেশটিতে মূলত প্রবীণদের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধার মত ঘটনা ঘটেছে।
তবে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, মেক্সিকো এবং নাইজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ নাগরিকদের আশ্বস্ত করে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ প্রশাসন- ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) টিকাটির ইঞ্জেকশন নিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে আশ্বস্ত করেছে। প্রতিষেধকটি নেওয়ার সুফল, এর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির চাইতে অনেক বেশি বলেও মন্তব্য করে নিয়ামক সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক, মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি জারি করে জনগণকে আশ্বস্ত করেছে। তারা জানায়, এই ভ্যাকসিনটি এখনও নিরাপদ এবং প্রত্যেকের উচিত নিজের ভ্যাকসিন গ্রহণ অব্যাহত রাখা।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ার ভারানও বৃহস্পতিবার তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মানুষকে ভ্যাকসিন নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, "যখনই কোন গুরুতর প্রতিকূল প্রভাব দেখা গেছে, তৎক্ষণাৎ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখানে কী নিয়ে কথা বলছি! পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ইউরোপীয়দের মধ্যে যেখানে মাত্র ৩০ জনের মত টিকা গ্রহণ করেছে!"
যুক্তরাজ্যের এমএইচআরএ এর মতে, প্রাকৃতিকভাবেই কখনো কখনো রক্ত জমাটের ঘটনা হতে পারে এবং এটি অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে ভ্যাকসিনের সুরক্ষার নেতৃত্বে থাকা ফিল ব্রায়ান যোগ করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত রক্ত জমাট বাঁধার যতগুলো খবর এসেছে তা মোট ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার চাইতে অনেকগুণ পিছিয়ে"।
জার্মানি গত বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে যে, তারা ভ্যাকসিন দেয়া অব্যাহত রাখবে। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন বলেন, "আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউরোপীয় দেশগুলোর মতই অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা প্রদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি" ।
- সূত্র: সিএনএন