ফিলিস্তিনদের গুলি করে হত্যার অপরাধে ইজরায়েলি সৈন্যদের কি কোনো শাস্তি পেতে হয়?

২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের আল-আরুব শরণার্থী শিবিরের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছেন ২২ বছর বয়সি ওমর বাদাউই। উদ্দেশ্য, বাড়ির বাইরে লাগা ছোট একটা আগুন নেভানো। শিবিরে হামলা চালানো সৈন্যদের লক্ষ্য করে একটা মলোটভ ককটেল ছুড়ে মেরেছিল কিশোররা। আগুনটা লেগেছিল ওই লক্ষ্যচ্যুত ককটেল থেকে।
বাদাউই একটা তোয়ালে হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তার ঘরের দেয়ালে লাগা আগুন নেভাবেন বলে। সেটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। সেই ভুলের মূল্য তাকে চুকাতে হয়েছে প্রাণ দিয়ে।
ঘরের বাইরে পা রাখতেই পাশের গলিতে টহলরত সৈনিক বিনা বাক্যব্যয়ে তাকে নিশানা করে গুলি করে।
পুরো ঘটনাটা—বাদাউইয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা, হাতে তোয়ালে নেওয়া, তাকে গুলি করা—ভিডিও করে ফেলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা।
অভ্যাসবশে, বরাবরের মতোই, ঘটনাটার ব্যাপারে তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয় ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ ঘটনার দুই বছর পূর্তির সময় আইডিএফেরর কাছে বাদাউইর মৃত্যুর তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। হারেৎজকে জানানো হয়, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
অবশেষে এই সপ্তাহে আইডিএফের মুখপাত্র হারেৎজকে জানান, 'ওই ট্রুপকে যারা কাভার দিচ্ছিল, তাদের একজন ওই গলিতে এক ফিলিস্তিনির হাতে একটা সাদা কাপড়ের টুকরো দেখতে পায়। কাপড়ের টুকরোটিকে ওই সৈনিক মলোটভ ককটেলের অংশ ভেবে ওই ব্যক্তির উদ্দেশে গুলি ছোড়ে। গুলির আঘাতে ওই ফিলিস্তিনি মারা যায়। এই ঘটনার জেরে একটি মিলিটারি পুলিশ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে বলা যায়, (ওই সৈন্যের বিরুদ্ধে) কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ন্যায়সংগত হবে না।'
একজন নিরস্ত্র যুবক, কারও জন্য তিনি হুমকি নন। অথচ তিনি একটা তোয়ালে হাতে ঘর থেকে বেরোতেই ইজরায়েলি সৈন্য ধরে নিল তার হাতে ওটা মলোটভ ককটেল। তাই সাতপাঁচ না ভেবে তৎক্ষণাৎ যুবককে হত্যা করল।
ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর চোখে গুলি চালানো ওই সৈনিকের কাজ ছিল নির্দোষ। কাজেই ওই কেস ওখানেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ওই সৈন্যকে সামান্য তিরস্কার করারও প্রয়োজন বোধ করেনি।
এমনকি ফেহমিয়ে হ্রুব নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বয়স্ক নারীকে হত্যার পর তো তদন্ত করারও প্রয়োজন বোধ করেনি আইডিএফ। আইডিএফের মতে, হাতে রান্নাঘরের ছুরি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার কারণে হ্রুবকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইজরায়েলি সৈন্যের কোনো অপরাধ হয়নি।
গত আড়াই বছরে ইজরায়েলি সৈন্যদের হাতে নিহত অথবা গুরুতর আহত হয়েছে, এমন ১৮ জন ফিলিস্তিনির ব্যাপারে আইডিএফের কাছে জানতে চেয়েছিল হারেৎজ। জানতে চেয়েছিল, এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে শুরু করা তদন্তের ফলাফল কী?
জানা গেছে, ৫টি কেসের তদন্তের সমাপ্তি টেনেছে আইডিএফ। কারণ এই ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী সৈনিকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ন্যায়সঙ্গত মনে হয়নি আইডিএফের কাছে। বাকি ১৩টি ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে বলে জানিয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী।
ফিলিস্তিনিদের হত্যা অথবা জখম করার এই ১৮টি ঘটনায় একবারও দায়ী সৈন্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। এই আঠারোটি ঘটনার তদন্তের পরিণতি সম্পর্কে হারেৎজ যা জানতে পেরেছে, তা নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ওমর বাদাউইয়ের হত্যাকাণ্ড। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আল-আরুব শরণার্থী শিবিরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া যুবক। তদন্ত সমাপ্ত।
২. ২০১৯ সালের ১২ জুলাই কাফর কাদ্দুমে ৯ বছর বয়সি আবদ আল-রহমান শাতাউইকে মাথায় গুলি করা হয়। সে এখন অচেতন অবস্থায় আছে। মাত্র নয় বছর বয়সি এই ছেলে তার বন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় প্রায় ১০০ মিটার দূর এক এক সৈনিক সরাসরি তার মাথায় গুলি করে।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় আইডিএফ জানায়, যারা 'শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছিল', সৈনিকরা তাদের ওপর রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি চালায়। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, 'হইচইয়ের' মধ্যে 'দুর্ঘটনাবশত' শাতাউইয়ের মাথায় গুলি লাগে। আইডিএফের মতে, এ ঘটনায় তদন্ত কমিশন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
৩. ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারির ঘটনা। কাফর কাদ্দুমে সাপ্তাহিক বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছিল। মিছিল চলাকালে বড় একটা পাথরের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ১৪ বছর বয়সি মোহাম্মদ শাতাউই। পাথরের আড়াল থেকে উঁকি দিতেই এক ইজরায়েলি সৈন্য তাকে গুলি করে। শাতাউইও এখনও জ্ঞান ফিরে পায়নি। এ ঘটনার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
৪. সহকর্মীর সঙ্গে পুলিশ স্টেশনের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ফিলিস্তিনি পুলিশ কর্মকর্তা তারেক বাদওয়ান। সহসা এক ইজরায়েলি সৈনিক বিনা উসকানিতে গুলি করে হত্যা করে বাদওয়ানকে। ঘটনাটা ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির।
আইডিএফ প্রথমে দাবি করেছিল, পুলিশ স্টেশন থেকে ইজরায়েলি সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরপরই একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, বাদওয়ান যখন একেবারেই নিরীহ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন গুলি করা হয় তাকে। ভিডিও ক্লিপটি ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বক্তব্য পাল্টে ফেলে আইডিএফ। কিন্তু ঘটনার তদন্তও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি।
৫. ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাফিন গ্রামের কাছে এক ক্রসিং পয়েন্টে ব্যারিকেডের কাছে গিয়ে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন ২০ বছর বয়সি বাদের হারাশি। সে সময় হত্যা করা হয় হারাশিকে।
ইজরায়েলি বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য এক আরবিভাষী সৈনিকের সমালোচনা করেছিলেন হারাশি। সৈনিকটি চলে যায়, তবে কয়েক মিনিট পরেই একটা জিপে করে ফিরে আসে। গাড়ির দরজা খুলেই সে হারাশিকে গুলি করে।
এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আইডিএফের দাবি, বিক্ষোভের সময় সৈনিকরা এক ফিলিস্তিনিকে মলোটভ ককটেল ছোড়ার প্রস্তুতি নিতে দেখে। তা দেখে যুবকের ওপর গুলি করা হয়।
এ ঘটনার জেরে মিলিটারি পুলিশের তদন্ত শুরু হয়। 'তদন্ত' শেষ হওয়ার পর জানা যায়, যে প্রমাণাদি পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে ওই সৈনিকের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ভিত্তি নেই।
৬. ১৭ বছর বয়সি জাইদ কায়সিয়াহর স্বপ্ন ছিল গায়ক হবেন। মায়ের কিনে দেওয়ার সাধারণ এক বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শরণার্থী শিবিরের রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে বেড়াতেন কায়সিয়াহ।
কিন্তু এই তরুণের গায়ক হওয়ার স্বপ্নের অকালমৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৩ মে।
এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক ফেসবুকে অনৈতিক কথাবার্তা লিখেছিল বলে তাকে ধরতে আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবিরে হাজির হয়েছিল ইজরায়েলের এলিট বাহিনী। সে সময়ই প্রাণ হারান কায়সিয়াহ।
নিজের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিলেন, এমন সময় বেশ দূর থেকে কায়সিয়াহকে গুলি করে ইজরায়েলি সৈনিকরা। এ ঘটনার ব্যাখ্যার আইডিএফ দাবি করে, 'বিশৃঙ্খলা দমানোর জন্য আইডিএফের সৈন্যরা গুলি ছোড়ে।' ওই 'নির্দোষ' গোলাগুলির ঘটনায় 'দুর্ঘটনাবশত' এক ফিলিস্তিনি তরুণ গুলি খায় বলে জানায় আইডিএফ।
এ ঘটনার জেরে আইডিএফ তদন্ত কমিশন গঠন করে। কিন্তু তরুণ কায়সিয়াহ কীভাবে গুলি খেয়েছেন কিংবা আইডিএফের সৈন্যদের গুলিতেই মারা গেছেন কি না, তা 'নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি' ওই তদন্তে। এ কারণে এ ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কোনো 'কারণ দেখেনি' আইডিএফ।
৭. চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাফা-র সেপারেশন ব্যারিয়ারের পাশে গুলি করা হয় ১৭ বছর বয়সি আহমেদ ফালানাকে। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুরুতর আহত ফালানাকে দুবার হাসপাতালে ভর্তি এবং কারাগারে পাঠানো হয়। ফালানার বাবা-মাকে তার অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। এ ঘটনার তদন্তও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি।
৮. এ বছরের ৫ এপ্রিল উত্তর জেরুজালেমের সড়কের ৩৫ বছর বয়সি ওসামা মানসুরের গাড়ির ওপর গুলিবৃষ্টি চালিয়ে তাকে হত্যা করে ইজরায়েলি সৈন্যরা। মানসুর তার স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, এমন সময় এক সৈন্য তাকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেয়। নির্দেশ দেওয়ার এক মিনিট পরই সৈন্যরা গাড়িটির ওপর কয়েক ডজন গুলি চালায়। গুলিতে মারা যান সবজি ব্যবসায়ী মানসুর, আহত হন তার স্ত্রী। এতিম হয়ে যায় তার পাঁচ সন্তান। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
৯. ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল হেব্রন বাজারে ইজ আ-দীন আল-বাতাশের চোখে গুলি করে ইজরায়েলি সৈন্যরা। ১৪ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি বালক বাজারের এক সবজির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় এক সৈনিক খানিক দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এ ঘটনার তদন্তও শেষ হয়নি।
১০. ৬০ বছর বয়সি ফেহমিয়ে হ্রুব, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। করোনা মহামারির সময় তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। চলতি বছরের ৩ মে মানসিক ভারসাম্যহীন হ্রুব রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন হাতে একটা রান্নাঘরের ছুরি নিয়ে। গুশ এতজিয়ন জংশনে পৌঁছতেই গুলি করে তাকে হত্যা করে ইজরায়েলি সৈনিকরা। গুলি খাওয়ার পর, চিকিৎসা সেবা পাওয়া আগে, ৪০ মিনিট চেকপয়েন্টেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তিনি।
আইডিএফের মতে, হ্রুব ছিলেন 'সন্ত্রাসী'। তাকে থামতে বলা হলেও তিনি থামেননি। তাই 'বাধ্য হয়ে' সৈন্যরা তার ওপর গুলি চালিয়েছে। একটি প্রাথমিক তদন্ত করা হলেও হ্রুবকে হত্যার পেছনে কোনো 'আইনি অপরাধ পাওয়া যায়নি'।
১১. ২০২১ সালের ১২ মে আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবিরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হুসেইন তিতি। নিজ শরণার্থী শিবিরে ইজরায়েলি সৈন্যরা হানা দিলে ঘটনা কী জানবার জন্য বাড়ির ছাদে ওঠেন ২৮ বছর বয়সি তিতি। ছাদে দাঁড়িয়ে উঁকি দিতে তাকে গুলি করে হত্যা করে ইজরায়েলিরা। এ ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি।
১২. দুদিন আগে বাবা হয়েছেন পশ্চিম তিরের ইয়াতমা গ্রামের তারেক স্নবার। হাসপাতালে যাচ্ছিলেন স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু নবজাতক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি তার। হাসপাতালে যাবার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় স্নবারকে। আইডিএফের এক সৈন্যকে দেখা গিয়েছিল ১০০ মিটার দূর থেকে স্নবারকে গুলি করতে। এ বছরের ১৪ মে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও আজ পর্যন্ত শেষ করতে 'পারেনি' আইডিএফ।
১৩. রামাল্লার উত্তর-পশ্চিম প্রবেশপথে চলতি বছরের ১৫ মে হত্যা করা হয় ফাদি ওয়াসাহাকে। ২৪ বছর বয়সি ছাত্র ও অধিকারকর্মী ওয়াসাহাকে নাকবা দিবসে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় প্রায় ১০০ মিটার দূর থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওয়াসাহার পরিবারের বিশ্বাস, তিনি অধিকারকর্মী ছিলেন বলেই তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। আরও অনেক ঘটনার মতোই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও এখনও শেষ হয়নি।
১৪. গ্রেড ১১-এর শিক্ষার্থী ইসলাম বুরান্তকে এক মিছিলে মাথায় গুলি করে হত্যা করে ইজরায়েলি সৈন্যরা। ২০২১ সালের ১৮ মে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও শেষ করেনি আইডিএফ।
১৫. ২৩ জুলাই ২০২১। রামাল্লার অনতিদূরেই নবি সালেহ গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মাদ তামিমি। সেদিন ওই গ্রামে হানা দিয়েছিল ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। আইডিএফের গাড়ি পার হওয়ার সময় হঠাৎ ঘরের দরজার খুলেছিলেন তামিমি, সঙ্গে সঙ্গে তাকে লক্ষ্য গুলি ছোড়ে এক সৈনিক। আহত তামিমি মাটিতে পড়ে যান, তারপর উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও ইজরায়েলি সৈন্যরা আরও দুবার গুলি করে তাকে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত? এখনও শেষ হয়নি।
১৬. এ বছরের ২৭ জুলাই নাবলুস অঞ্চলের বেইতা গ্রামের প্রবেশমুখে গুলি করে হত্যা করা হয় প্লাম্বার শাদি শুরাফিকে। হাতে একটা রেঞ্চ নিয়ে হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে 'বিপদের আশঙ্কায়' তাকে গুলি করে ইজরায়েলি সৈন্যরা। শুরাফির হাতের রেঞ্চকে সে অস্ত্র ভেবেছিল। তার মরদেহ ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। শুরাফির লাশ আজও দাফনের জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও শেষ হয়নি।
১৭. এভিয়াতারে ইজরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন চার মেয়ে ও শিশুপুত্রের বাবা ইমাদ দুইকাত। সেখানে পানি খাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালের ৭ আগস্ট সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি।
১৮. এ বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর এভিয়াতারে অবৈধ ইজরায়েলি আউটপোস্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে গিয়েছিলেন ২৮ বছর বয়সি মোহাম্মদ খাবিসা। ৮ মাস বয়সি এক মেয়ের পিতা খাবিসাকেও গুলি করে হত্যা করে ইজরায়েলি সেনা। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও, অনুমিতভাবে, শেষ হয়নি।