‘জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব বাস্তবায়নে উচ্চ-পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন’

বাংলাদেশে ব্যবসারত জাপানি ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলো বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, কিছু বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রোববার জাপানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ কথা বলেন তারা।
তবে, 'বাংলাদেশ-জাপান যৌথ সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক সংলাপ'-এ অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের শুল্ক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। এছাড়া, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডের ভিতরে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি ও যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সংলাপে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিডা, বেপজাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশে ব্যবসারত জাপানি বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ইপিজেড এলাকার কোম্পানিগুলোর জন্য বন্ড লাইসেন্স না নেওয়া, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে জাপানি ব্যবসায়ীদের।
সভায় এনবিআর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সভায় এনবিআরের পক্ষে যোগ দেওয়া কাস্টমস পলিসি মেম্বার সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া টিবিএস-কে বলেন, "আমরা বলেছি যে, ইপিজেডের ভেতরের কোম্পানিগুলোর সুবিধা বাড়াতে হলে তা ইপিজেডের বাইরের কোম্পানিকেও দিতে হবে। শুধু ইপিজেডভূক্ত কোম্পানিগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিলে তা বৈষম্য সৃষ্টি করবে। তাই এ বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)-এর ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম উইং এর সদস্য সঞ্জয় কুমার চৌধুরিও সভায় অংশ নেন।
তিনি বলেন, "এখানে বিডা সংশ্লিষ্ট দু'টি বিষয় রয়েছে, যার অগ্রগতি আমরা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। জাপানিদের প্রস্তাব মেনে কমার্শিয়াল অপারেশনে যাওয়ার আগে আমদানি করা মেশিনারিজের সিএন্ডএফ মূল্যের ৬ শতাংশ পর্যন্ত রয়্যালটি ও টেকনিক্যাল ফি বাবদ ট্রান্সফারের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু জাপানিরা এটি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।"
"নির্ধারিত ৬ শতাংশ যাতে জাপানিরা ব্যবহার করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। এটি আরও বাড়ানো যায় কিনা, বাড়ালে আমাদের বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বিডাকে নির্দেশ নিয়েছেন তিনি," যোগ করেন বিডা কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, "ব্রাঞ্চ অফিস স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাপানিদের যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো সম্পৃক্ত করে আমরা একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছি। নীতিমালাটি দ্রুতই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে বলেছেন মুখ্যসচিব।"
বাংলাদেশে জাপানিদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গত বছরও এই সংলাপ আয়োজন করেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তখন জাপানিদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল, গত এক বছরে তার মাত্র তিনটি কার্যকর হয়েছে।