রেমিট্যান্সে ডলারের রেট না মানলে কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই শাস্তি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকগুলোকে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স কেনার মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার দুই দিন পর ফের আগের নির্ধারিত রেটেই রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলতে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার (৩১ জুলাই) ব্যাংকগুলোকে ফোন করে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১১৮ টাকার বেশি রেট না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন অন্তত চারটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনলে কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই শাস্তির হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের মৌখিক নির্দেশনা দিতে পারে না।
এর আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গত রোববার ব্যাংকগুলোকে ফোন করে রেমিট্যান্সের ডলারের রেট বেশি দেওয়ার জন্য বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকতে পারে।
এর আগে ডলারের দর ৭ টাকা বাড়ানোর পর গত মে মাসে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং জুনে ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিরতা, পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, তিন দিন ব্যাংক বন্ধ থাকা এবং ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্স পাঠানো নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রচারণার জের ধরে গত ব্যাংক খাতে গত ১০ দিন ধরে রেমিট্যান্স আসা কমেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, 'বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফোন করে বেশি রেট না দিতে বলেছে। তারা আরও বলেছে, আমরা বেশি রেট দিলে জরিমানা করা হবে।'
'এমন নির্দেশনা পেয়ে আমরা নির্ধারিত রেটের মধ্যে থেকেই এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে চেয়েছিলাম। তবে এই রেটে খুব বেশি রেমিট্যান্স পাইনি। অথচ দুইদিন আগেই রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে বেশি রেট দিয়ে হলেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার নির্দেশনা দিয়েছিল আমাদের।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বারবার নীতিবদলের কারণে ডলারের বাজার গত কয়েকদিনে অস্থির হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে আরেকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, দুইদিন পরপর ব্যাংকগুলোকে এভাবে ফোন দিলে বাজার অস্থির হয়ে পড়ে, এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝতে পারছে না।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'এভাবে ফোন করে মানিমার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে উল্টো বিপদে পড়তে হয় বলে বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এমনভাবে ফোন করে নির্দেশনা দেওয়ার জের ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা ভুলে গেছে।'
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের রেট নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাধানিষেধের জের ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। বাংলাদেশ সাধারণত প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স পায়।
অবশ্য এক প্রবাসী বাংলাদেশি জানিয়েছেন, বুধবার জনপ্রিয় এক্সচেঞ্জ হাউজ মানিগ্রাম রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১২০.৫৮ টাকা দাম দিয়েছে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন রেমিট্যান্সের ডলারের রেট দিয়েছে ১১৯.৫০ টাকা। গত তিন দিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৯ টাকার বেশি রেট দিচ্ছে।
বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার পর্যন্ত রেমিট্যান্সের ডলারের রেট ছিল সর্বোচ্চ ১১৮.৬০ টাকা। মাসখানেক ধরে এর কাছাকাছিই ছিল ডলার রেট। তবে ওইদিন ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে রেমিট্যান্স কেনার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই ডলারের দাম বেড়ে ১১৯.৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।
অবশ্য শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, স্বাভাবিকভাবে ডলারের দামে উত্থান-পতন থাকবেই। ডলারের বাজার কোন দিকে যাচ্ছে, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অন্তত কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলাবাজারে নগদ ডলারও গতকাল বুধবার ১২৪ টাকা রেটে বিক্রি হয়েছে। তবে অনেক মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান ১২৫ টাকা দামেও ডলার বিক্রি করেছে।
অবশ্য মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১১৯ টাকা রেটে ডলার বিক্রির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের সভাপতি এমএস জামান টিবিএসকে বলেন, অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ডলারের দাম বাড়ার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
'এ কারণে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সদস্য মানি চেঞ্জারদের কাছে চিঠি দিয়েছি,' বলেন তিনি।