চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সে শীর্ষে আমেরিকা, দ্বিতীয় স্থানে নেমেছে সৌদি আরব

আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স পাঠানোর সার্বিক তালিকায় এখনো শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গত দুই অর্থবছরে দেশটি তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমেরিকা থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক বিলিয়ন ডলার।
মাসভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দেশটি থেকে ২৩% কম রেমিট্যান্স এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমেরিকাতে স্থায়ী হওয়ার আগে বিনিয়োগের সুযোগ আগের তুলনায় কমে এসেছে। তাই সেখান থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে।
এছাড়া গত কয়েক বছরে প্রচুর শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে গেছে। তারাও ডলার পাঠাচ্ছে।
এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে প্রথম অবস্থানে থাকা সৌদি আরব এই অর্থবছরে নেমে গেছে দ্বিতীয় স্থানে।
মূলত শ্রমিকেরা দেশটি থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। চলতি অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ থেকে এসেছে ৯৯৯ মিলিয়ন ডলার।
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে ২৪% এর বেশি। সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমার হার ১০% এরও কম।
তবে এর ঠিক উল্টো অবস্থা তৃতীয় স্থানে থাকা আরব আমিরাতের। দেশটি থেকে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ১২৫ মিলিয়ন ডলার কম এসেছে। কমার হার ৪১% এর বেশি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, "আরব আমিরাত হুন্ডির একটি হাব হিসেবে কাজ করে। এসব দেশে এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে। তাই সেখানে ফরেন কারেন্সির ডিমান্ড আগের তুলনায় বেড়েছে। সেসব কারেন্সির যোগান দিতে হুন্ডিও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।"
ব্যাংকাররা বলছেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ১০৮ টাকা নির্ধারণ করার কারণেই মূলত রেমিট্যান্সে এই ধ্বস নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে সেটিকে আবার কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।
ডলার নিয়ে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার কারণে দাম নির্ধারণের আগে ব্যাংকগুলোকে ১১১-১১২ টাকায় রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হতো।
ব্যাংকারদের এই মতের প্রতিফলন পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিট্যান্সের তথ্যে। আগস্টের শেষ ১৩ কার্যদিবসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.১২ বিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন গড়ে ৮৬ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে রেট নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ১৫ কার্যদিবসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার, গড়ে ৬৩ মিলিয়ন।
অর্থাৎ, দাম বেঁধে দেওয়ায় পর প্রতিদিন রেমিট্যান্স কম এসেছে ২৩ মিলিয়ন ডলার বা ৩৭%।
অবশ্য, দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে রেমিট্যান্স কমতে পারে- এমন আশঙ্কা শুরুর দিকেই করেছিলেন ব্যাংকাররা।
রেট নির্ধারণের পর প্রথম সপ্তাহেই রেমিট্যান্স কম এসেছে বলে জানিয়েছিল এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। তারা বলেছিল, দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে রেমিটারদের রেট বেশি দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে হুন্ডি চ্যানেল আরো সক্রিয় হতে পারে বলে শঙ্কা জানান তারা।
আমেরিকা প্রথম স্থানে চলে আসা নিয়ে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, "মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের রেমিট্যান্স আসা আগের তুলনায় কমে গেছে। তাই আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স খুব বেশি না বাড়লেও সেটি প্রথম স্থানে চলে এসেছে।"
তালিকায় ১৮তম অবস্থানে থাকা জাপান থেকে রেমিট্যান্স আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
আগস্টে দেশটি থেকে ১৩ মিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। সেপ্টেম্বরে সেটি ৫ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপানে বসবাসকারী বাংলাদেশি এবং একজন সিআইপি (কমার্সিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন) কাজী সরওয়ার হাবীব টিবিএসকে বলেন, অন্য অনেক দেশের মতো জাপানে প্রবাসীদের যাওয়ার হার কম।
ডলারের রেট বেঁধে দেওয়ার কারণে এই দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমতে পারে বলে জানান তিনি। হাবীব আরো বলেন, ওয়েজ আর্নাস বন্ডে বিনিয়োগে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রবাসীরা বিনিয়োগও কম করছেন।