‘বিপর্যয়’ থেকে বাঁচতে পদ্মা ব্যাংককে বিদেশি বিনিয়োগ খোঁজার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুর্নীতিতে ডুবতে বসা তৃতীয় প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)-কে 'বিপর্যয়' থেকে বাঁচাতে বিদেশি বিনিয়োগ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৫ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এ পর্যায়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃক 'বৈদেশিক মূলধন আনয়ন সম্ভব হলে তা করাই শ্রেয় হবে' বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।
এর আগে ফারমার্স ব্যাংক থেকে নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক নামে নবযাত্রা শুরুর তিন বছরের মাথায় 'যেকোনো ধরনের বিপর্যয়'-এর আশঙ্কা করে গত জুলাইয়ে সরকারের যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে ব্যাংকটি।
এর আগে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা (ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি) ১২.৫ শতাংশ ধরে রাখার জন্য ২,৪০০ কোটি টাকার জোগান পেতে চেষ্টা করে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটিতে থাকা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ১,২০০ কোটি টাকার আমানতের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর ৬০০ কোটি টাকাকে প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ারে রূপান্তর এবং এডিশনাল সার্ব-অডিনেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আরও ৬০০ কোটি পাওয়ার চেষ্টা করে পদ্মা ব্যাংক।
পদ্মা ব্যাংকের এই দুটি প্রস্তাবই রোববারের চিঠিতে নাকচ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আলী আকবর ফরাজী বলেন, ব্যাংকের জমাকৃত আমানতের অর্থের এরূপ রূপান্তর ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
একীভূতকরণের আবেদনের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, "রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো নিজেরাই অধিক মাত্রায় খেলাপী ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও অন্যান্য আর্থিক সূচকসহ ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে।"
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুন পদ্মা ব্যাংকের চিঠির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেলমরগ্যান এন্ড কোম্পানি'র সহায়তায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের আবেদন করা হয়। ওই আবেদন পর্যালোচনা করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২ আগস্ট এর নীতিগত অনুমোদন দেয়।
পদ্মা ব্যাংক পূর্বে ফার্মার্স ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক—সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী—এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অভ বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। সে সময় পদ্মা ব্যাংককে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই পাঁচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু নাম বদলে পদ্মা ব্যাংক হওয়ার পরও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। এ কারণে 'সম্ভাব্য ধস' আন্দাজ করতে পেরে বেঁচে থাকতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ব্যাংকটি। এটা সম্ভব না হলে সরকারি যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় পদ্মা ব্যাংক।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু গত ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের প্রস্তাব জমা দেন।
সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক—এই পাঁচ ব্যাংকের যেকোনো একটির সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় ব্যাংকটি।