পাঁচ মাস পর তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু

দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর সিলেটের তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত সোমবার সকাল ১১ টা থেকে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় লকডাউনের কারণে দেশের অন্যান্য স্থল বন্দরের মতো গত মার্চ থেকে তামাবিল স্থল বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিন জানান, দীর্ঘ পাঁচ মাস পর সোমবার থেকে তামাবিলে আমদানি-রপ্তানি চালু হয়েছে। ওইদিন ভারত থেকে চারটি ও মঙ্গলবার একটি পাথরবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বুধবার বিকেলে আসে ১২টি ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আসে চারটি ট্রাক।
এদিকে, বুধবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে দৈনিক 'শিলং টাইমস'-এ প্রকাশিত একটি খবর সূত্রে জানা যায়, ভুটান থেকে বাংলাদেশে আসা পাথরবাহী ট্রাক ওই রাজ্যের ডালু শহর দিয়ে চলাচল করে। এতে ডালু শহরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে ট্রাক চলাচল বন্ধে দুই দিনের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ডালু এরিয়া নাগরিক ফোরাম (ডিএসিএফ)। বাংলাদেশমুখী ট্রাক চলাচল বন্ধে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
মেঘালয়ের এই আন্দোলনের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন তামাবিল স্থল বন্দর কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকদিন ধরেই মেঘালয়ের একটি আদিবাসী গোষ্ঠি বাংলাদেশে ট্রাক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশে ট্রাক প্রবেশের ফলে তাদের এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে এমন দাবি তুলে আন্দোলন করছে সেখানকার কিছু সংগঠন। এদের আন্দোলনের কারণে তামাবিল স্থলবন্দরের কার্যক্রম আগে চালু করা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১০ আগস্ট সেদেশের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসক তামাবিল সীমান্তে বৈঠক করেন। বৈঠকে দু-দেশের আমদানি রফতানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর (১৫ আগস্ট) আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ আগস্ট এই স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়।
তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ডালুর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন বৈঠক করে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন করে তাদের আন্দোলনের ব্যাপারে জানি না।
তিনি বলেন, তামাবিল দিয়ে মূলত ভারত থেকেই চুনাপাথর ও বোল্ডার পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে ভূটান থেকেও কিছু বোল্ডার পাথর আমদানি হয়। যদিও গত পাঁচ মাসে এই বন্দর দিয়ে ভূটান থেকে কোনো পাথর আসেনি।
বুধবার বিকেল পর্যন্ত ভারত থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক না আসা প্রসঙ্গে তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আমদানিকারকদের একটা ঝামেলা হয়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পণ্যে বাড়তি শুল্ক রাখছিল। এ কারণে আমদানি বন্ধ ছিল। তবে বুধবার দুপুরে দুপক্ষের বৈঠকে এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন আবার আমদানি রফতানি চালু হয়েছে।
তামাবিল স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সজিব মিয়া বলেন, পাঁচ মাস বন্ধ থাকার ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব হারিয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে স্থল বন্দর প্রশাসনের উদ্যোগে এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের সহযোগিতায় পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় প্রতিটি ট্রাককে জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বাধ্যতামূলকভাবে জীবানুনাশক স্প্রে করা হবে। এ ছাড়াও তামাবিল ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত মেডিকেল টিম ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেবে।