চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ: এইচএসবিসি

চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান দ্য হংকং এন্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচএসবিসি)।
'বাংলাদেশ মার্কেট ইনসাইটস ২০২১: কনসাম্পশন প্রোপেলিং গ্রোথ' শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশ নিয়ে এক ওয়েবিনারে বুধবার এ পূর্বাভাস দিয়েছে এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এইচএসবিসি বলছে, ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফেরা, মাঝারি পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির উপর ভর করে ব্যক্তিগত ভোগব্যয় বাড়বে। তার ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকবে।
ফলে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে করোনাভাইরাস মহামারির এমন গুরুতর পরিস্থিতির কারণে আগামী অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে থাকবে বলে মনে করছে তারা।
অন্যদিকে সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আসিয়ানের ইক্যুইটি স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস দেবেন্দ্র জোশি।
তিনি বলেন, "রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ গত এক দশকে দারুণ সফলতা দেখিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে অসাধারণ উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে ভালো করেছে"। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির তুলনায় উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশে অর্থনীতির তুলনায় শেয়ারবাজার বেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন দেবেন্দ্র জোশি।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম দুটি প্রতিযোগি দেশ। মার্কেট সাইজ ও মুভমেন্টের দিক থেকে উভয় দেশের বাজার একই ধরণের। তবে গত দশ বছরে ভিয়েতনামের ক্যাপিটাল মার্কেট ৪ গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজার প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে"। ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য এখন ভালো সময় বলে মনে করছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গত দশ বছরে ভোগব্যয় বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি, শহরের প্রবৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয় নিয়ে প্রতিযোগি দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছে এইচএসবিসি। প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে গত দশ বছরে দেশের অভ্যন্তরে একটা বিশাল ভোগ্যশ্রেণি তৈরি হয়েছে। ই-কমার্সের প্রসারে সাম্প্রতিক সময়ে প্লাস্টিক কার্ডের মাসিক লেনদেন ২.৭ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বিশাল ভোগ্যশ্রেণি তৈরি হওয়ায় এখানে বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আমাদের বন্দর সুবিধা এখনো একটি বড় সমস্যা। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। কলম্বো বন্দর নির্ভরতার কারণে এটি বেশি হচ্ছে মনে করেন তিনি। এছাড়া ইউরোপের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিতে এখনই আলোচনা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আহমেদ কায়কাউস বলেন, "শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর নির্ভরতা কমিয়ে আমরা সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। নিজেদের দেশে চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো কার্যকর করার পাশাপাশি পায়রা, মোংলা ও মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরকে প্রস্তুত করছি। করোনার কাজ কিছুটা শ্লথগতিতে হলেও তা দ্রুত করার পরিকল্পনা নিয়েছি"।
তিনি বলেন, "অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে ফ্যাসিলিটেটেড করার কারণে দেশে শিল্পায়ন হয়েছে। ভোগব্যয় বৃদ্ধির এটি একটি বড় কারণ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবার কাছে বিস্ময়। তবে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ক্যাপিটাল মার্কেট অর্থনীতির অবস্থাকে প্রকাশ করে না"।
বিনিয়োগের জন্য স্টক মার্কেট থেকে অর্থ উত্তোলন একটি বড় মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই এর সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস-চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন এবং এইচএসবিসি এশিয়া-প্যাসিফিকের ইন্টারন্যাশনাল সাবসিডিয়ারি ব্যাংকিংয়ের গ্লোবাল কো-হেড সন্দীপ উৎপল বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন।