অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কমেছে রপ্তানি আয়

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ বা শুরুর ছয় মাসে কমেছে দেশের রপ্তানি আয়-প্রবৃদ্ধি। যদিও ইতিবাচক অগ্রগতি নিয়েই তা শুরু হয়েছিল।
প্রথম প্রান্তিকের প্রতি মাসে ইতিবাচক হারে বেড়েছিল রপ্তানি আয়, কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রথম মাসেই তা কমে আসা শুরু হয়। অবশ্য নভেম্বর নাগাদ তা আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে।
তবে প্রথম ছয় মাসের শেষ পর্যায়ে আবারও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত: তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে মহামারী কালো ছায়া ফেলে। এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে।
অবশ্য আরএমজি ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটটাইলস, প্রকৌশল পণ্য এবং ওষুধ শিল্পের পণ্য রপ্তানি বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।
তবে প্রথমার্ধ শেষে ডিসেম্বর নাগাদ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩৬ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে এই হার ছিল দশমিক ৭৬ শতাংশ।
গতবছরের শেষ মাসে দেশের অর্থনীতিতে ৩৩০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় যোগ হয়। এটা অবশ্য তার আগের বছর (২০১৯) সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ৬.১৩% কম। ওই সময় ৩৫২ কোটি ডলার আয় হয়।
কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় জোয়ার চলমান থাকায় কবে নাগাদ ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে তা নিয়ে অনিশ্চিত দেশের বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকেরা। পোশাক শিল্প কারখানা মালিকেরা জানান, কোভিড পূর্ব সময়ের মতো বিদেশি ক্রেতা ও বড় ব্র্যান্ডগুলোও অর্ডার দিচ্ছে না।
ফতুল্লা অ্যাপারেলসের মুখ্য নির্বাহী ফজলে শামীম এহসান জানান, "আমাদের প্রধান প্রধান রপ্তানি বাজারে মহামারী সৃষ্ট প্রতিকূলতার কারণেই বস্ত্র খাতে রপ্তানি কম হয়েছে।"
বর্তমানে যেভাবে ছোট আকারের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো ইউনিট সচল রাখা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। বিশেষ করে, সংক্রমণের দ্বিতীয় জোয়ারে ইইউ ভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত হওয়ায়- এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
"ক্রেতারা এখন খুব সতর্কতার সঙ্গে কার্যাদেশ দিচ্ছে, আর দাম নিয়েও করছে অতিরিক্ত দর কষাকষি। অপরদিকে, বেড়েছে কাঁচামালের দাম" সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্কট তুলে ধরে বলেন এহসান। তিনি বিকেএমইএ- এরও একজন পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রে করোনার টিকা সহজলভ্য হবে এবং সেই সুবাদে ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু, টিকা এলেও সংক্রমণের দ্বিতীয় জোয়ারে অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ইপিবি'র দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রথম ছয় মাসে অ্যাপারেল রপ্তানি হয়েছে ১৫.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের ১৬.০২ বিলিয়ন ডলারের চাইতে ৩ শতাংশ কম।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির আয় খুবই উদ্দীপনামূলক ৩০.৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৬৬৮ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। হোম টেক্সটাইলে আয় হয় ৫৪৭ মিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হার ৪৮ শতাংশ। প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আসে ৩৮৯.৫ মিলিয়ন ডলার, এটি বেড়েছে ৫৭.৪৭ শতাংশ গতিতে। ওষুধ পণ্য রপ্তানি ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৪৮.৪৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে দেখা গেছে ৬.২৪ শতাংশ নেতিবাচক বৃদ্ধি নিয়ে ৪৪৬.১৩ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে।