অক্টোবরে আবারও রপ্তানি আয় হ্রাস

২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ে আবারও ধস নেমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ শতাংশ। পাটশিল্প ছাড়া অন্য সব রপ্তানি খাতের আয় কমেছে এ মাসে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ বছর অক্টোবরে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ২৯৫ কোটি ডলার, যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ৩০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।
এ বছর অক্টোবরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তৈরি পোশাক শিল্পে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে যথাক্রমে ৭ এবং ৮ শতাংশ।
বিগত মাসগুলোতে অন্যান্য খাতে রপ্তানি আয় কমে এলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এ বছর অক্টোবরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অন্যান্য শিল্পের তুলনায় হিমায়িত মাছ, ওষুধ শিল্প ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয়ও বেড়েছে বিগত মাসগুলোতে।
সার্বিকভাবে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মোট রপ্তানি আয় এক হাজার ২৮৪ কোটি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানায় সামনের মাসগুলোতে রপ্তানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকরা।
প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক জানান, পোশাক শিল্প বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মহামারির পরিস্থিতি বিবেচনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ রপ্তানি আয় হ্রাস তেমন বড় বিপর্যয় নয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সামনের দিনগুলোতে রপ্তানিকারকরা কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে পারেন বলেও জানান তিনি।
ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পোশাক শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের শাহীন আহমেদ জানান, চামড়াজাত পণ্য সবসময়ই বিলাসবহুল পণ্য, এবং মহামারির সময় এ ধরনের পণ্য বিক্রি কমে এসেছে। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সামনের মাসগুলোতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আরও কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় হ্রাসকে বর্তমান বাজার ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাকের চাহিদা ও দাম হ্রাসই এ পরিস্থিতির কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রেতারা পোশাকের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। চলমান মহামারির মধ্যে আরও কম দামের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।'
তবে চলমান কঠিন পরিস্থিতিতেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পর অক্টোবরের আয় হ্রাস ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হতে পারে- মন্তব্য করে সংশ্লিষ্টদের বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস
মহামারির মধ্যেও দেশের রেমিট্যান্স আয়ের প্রবাহ বজায় ছিল। তবে অক্টোবর মাসে কমে এসেছে রেমিট্যান্স আয়ও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা অক্টোবরে কমে হয়েছে ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। অক্টোবরের মোট রেমিট্যান্স আয় ছিল ২১১ কোটি ডলার, যা বিগত মাসের চেয়ে ২ শতাংশ কম।