টানা ছুটি শেষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি শুরু; পেট্রাপোলে আটকা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক

ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে রোববার (১৫ জুন) সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৬ ট্রাক পণ্য ভারতে রপ্তানি হলেও, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মাত্র ১০টি পণ্যবাহী ট্রাক।
জানা যায়, পেট্রোপোল বন্দরে সার্ভার জটিলতার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তাই ওপারের ট্রাক টার্মিনালে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাকের লাইন পড়ে গেছে।
এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, দীর্ঘ ঈদের ছুটির পর রোববার সকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, পেট্রাপোলে অনলাইন সিস্টেমে ত্রুটির কারণে মাত্র ১০ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে বেনাপোলে, যেখানে সাধারণত প্রতিদিন ৪৫০ ট্রাক পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। পুরোদমে কাজ শুরু হতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তবে প্রচণ্ড গরমে বন্দর অভ্যন্তরে বা ওপেন ইয়ার্ডে হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ওপারের ইন্টারনেট লাইন খারাপ থাকায় পণ্য ঢুকাতে পারছে পেট্রাপোল বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, দেশের ৮০ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আমদানিকারকরা গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ায় এখনও ঢাকায় তাদের অফিস খোলেনি।
তাই বন্দর থেকে পণ্য খালাসও তেমন নেয়া হচ্ছে না। পুরোপুরি কাজ শুরু হতে দু'একদিন লেগে যাবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, ঈদের ছুটিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে টানা ১০ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ওপারের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র ট্রাকজট সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দর এলাকা, বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং ও বনগাঁ পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন মুন্সি বলেন, 'ঈদে টানা ১০ দিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এ সময় পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। ভারত-বাংলাদেশ ভিসা কার্যক্রম সীমিত থাকায় এ সময় যাত্রীদের চাপ ছিল না। যাতায়াতকৃত যাত্রীদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সে জন্য ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছিল।'
বেনাপোল শুল্কভবনের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, টানা ছুটি শেষে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিনে কাস্টম হাউসে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি কম থাকায় কর্মকর্তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটিয়েছেন একে অপরের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
গতকাল রোববার সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হলেও ঢিমেতালে চলছে, তবে দুই এক দিনের মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, টানা ছুটি শেষে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় রয়েছেন কখন তাদের মালামাল আসবে। কিন্তু পেট্রাপোলে ইন্টারনেট জটিলতার কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক আনতে পারছেনা। এতে করে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
দেরিতে মালামাল পৌঁছানোর কারণে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল না আসার কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।