বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব থেকে ‘সরিয়ে দেওয়া হলো’ ফারুক আহমেদকে

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে থাকার শর্তও স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হারিয়ে ফেলায় কার্যত বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো তাকে।
ফারুকের বিরুদ্ধে বিসবির আটজন পরিচালকের স্বাক্ষর করা একটি অনাস্থা প্রস্তাব পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জারি করে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, 'ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে আটজন বিসিবি পরিচালকের পাঠানো অনাস্থা চিঠি এবং বিপিএল-সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি (ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আত্মাধীন) হিসেবে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।'
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মনোনীত দুই পরিচালকের একজন ছিলেন ফারুক। গত বছরের ২১ আগস্ট তিনি বোর্ড পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ওই দিনই সভাপতি পদেও নির্বাচিত হন। তার মেয়াদ স্থায়ী হলো মাত্র নয় মাস আট দিন।
যেসব পরিচালক অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন, তারা হলেন: নাজমুল আবেদীন ফাহিম, মাহবুবুল আনাম, কাজী ইনাম আহমেদ, ফাহিম সিনহা, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, ইফতিখার রহমান, সাইফুর আলম স্বপন চৌধুরী ও মঞ্জুর আলম। ফারুক আহমেদ নিজে ছাড়া আর একজন পরিচালকই ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি—সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান।
পরিচালকরা ফারুকের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তারা বলেছেন, বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৪-বি ধারা অনুযায়ী, কোচ নিয়োগ বা বরখাস্তে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু ফারুক পরিচালনা পর্ষদকে কিছু না জানিয়েই গত অক্টোবরে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেন।
পরিচালকরা আরও দাবি করেছেন, ২০২৪-২৫ মৌসুমে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংসকে অনুমোদন দেওয়ার সময়ও যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেননি ফারুক।
চিঠিতে আরও বলা হয়, যোগ্য পেশাদারদের বাদ দিয়ে আনুগত্য ও ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি না বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করছেন, না গণতান্ত্রিক সুশাসনের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন।
বিসিবির একজন পরিচালক ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বলেন , ফারুক পরিচালনা পর্ষদের বাকি সদস্যদের উপেক্ষা করেছে নতুন উপ-কমিটি গঠনে বিলম্ব করেছেন। তিনি বলেন, এ বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিতব্য বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিই ছিল তার মূল লক্ষ্য, যার ফলে তার ওপর থেকে পরিচালকদের আস্থা উঠে যায়।
এদিকে ফারুক বলেন, পরিচালকদের স্বাক্ষর করা অনাস্থা চিঠি দেখার পর তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'দেখি, কী করা যায়। কিছু একটা তো অবশ্যই করব। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলে রাখছি। প্রয়োজন হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। অনাস্থার কোনো সুযোগই বিসিবির গঠনতন্ত্রে নেই। তাই অনাস্থায় কিছু এসে-যায় না।'
তিনি আরও বলেন, 'চিঠিটা আমার হাতেও এসেছে। ওরা যেসব অপকর্ম নিজেরা করত, সেগুলোই আমার নামে বসিয়ে দিয়েছে। দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ।'