গত বছর ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মেডিকেল ট্যুরিস্টদের ৫৪ শতাংশই বাংলাদেশি

২০২০ সালে ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া বিপুল সংখ্যক বিদেশিদের মধ্যে শতকরা ৫৪ ভাগই গেছে বাংলাদেশ থেকে। ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এরপরেই আছেন ইরাকিরা, তাদের হার ৯ শতাংশ। এরপর আফগানিস্তান থেকে ৮ শতাংশ, মালদ্বীপ থেকে ৬ শতাংশ এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে গেছেন ৪.৫ শতাংশ লোক।
ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার ছিল ২৩.৬ শতাংশ। অথচ তখন ৫৭.৫ শতাংশ মেডিকেল ট্যুরিস্ট নিয়ে এ তালিকার শীর্ষে ছিল মালদ্বীপ।
২০১৯ সালে এ চিত্র পুরো উল্টে যায়। সে বছর ভারতে মেডিকেল ট্যুরিস্টদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার দাঁড়ায় ৫৭.৫ শতাংশ, বিপরীতে মালদ্বীপের হার নেমে আসে মাত্র ৭.৩ শতাংশে।
ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল অ্যান্ড ওয়েলনেস ট্যুরিজম প্রমোশন বোর্ডের সদস্য ডা. দেবী শেঠি জানান, ভারতে স্বল্পমূল্যে উচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা প্রতুল ফলে তাদের বিদেশি রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতে আসেন জটিল কার্ডিয়াক সার্জারি এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে।
উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের চিকিৎসা সেবার জন্য ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে খাবার, ভাষা, সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বলে ডা. দেবী শেঠি মনে করেন।
ভারত সরকারের ১৬৬টি দেশে ই-মেডিকেল ভিসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশ থেকে অভাবগ্রস্ত রোগীদের ভারতীয় হাসপাতালে সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা নিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে কিন্তু বৈশ্বিক মহামারির ধাক্কায় এ সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।
করোনা মহামারির প্রকোপ শুরুর পর অন্যান্য পর্যটকদের মতো ভারতে মেডিকেল পর্যটকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।
ডা. দেবী শেঠির মতে, করোনার প্রভাব কাটিয়ে ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম আগের অবস্থায় ফিরতে কয়েক মাস লেগে যাবে।
ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ফোরটিস হেলথকেয়ারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মনীষ মাত্তো বলেন, দিলি এবং মুম্বাইয়ের বেশিরভাগ রোগী আসেন বাংলাদেশ এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে। চেন্নাইতে মেডিকেল ট্যুরিস্ট আসেন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং মরিশাস থেকে।
তিনি আরও বলেন, "ব্যাঙ্গালুরুর অধিকাংশ মেডিকেল ট্যুরিস্ট আসে পশ্চিম এশিয়া, বাংলাদেশ এবং আফ্রিকান দেশগুলো থেকে"।
ডা. মাত্তো বলেন, খরচের দিক দিয়ে বিদেশি রোগীরা ভারতীয় রোগীদের চাইতে ২০% প্রিমিয়াম ব্যয় করেন। এখানে এমন একটা আবহের মধ্যে তারা থাকেন, যা শুধুই তাদের যত্ন ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছে।
তিনি বলেন, "বিদেশি রোগীরা বিমানবন্দরে পৌঁছানো থেকে শুরু করে থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা, নিজেদের পছন্দমত খাবার বেছে নেয়া এমনকি অনুবাদক রাখার সুবিধা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন"।
সময়ের সাথে ভারতে আসা বিদেশি রোগীদের চিকিৎসার ধরনও পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে ডা. মাত্তো বলেন, "২০১৬-১৭ সালের দিকে ইরাক এবং ইয়েমেন থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী আসত, এদের বেশিরভাগই ছিল যুদ্ধাহত পুরুষ রোগী। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে যেসব রোগী আসতে থাকল তাদের অধিকাংশই লিভার প্রতিস্থাপন এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন সার্জারির জন্য আসত"।
ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. হরিন্দর সিধু বলেন, গত বছর বেশ কিছু বাংলাদেশি রোগী বাসে করে প্রথমে কলকাতায় আসেন এবং পরে তাদের চেন্নাইতে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, কোভিড পরবর্তী সময়ে নিবেদিত আন্তর্জাতিক ডেস্কগুলোর মাধ্যমে এখন থেকেই বিদেশি রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় হাসপাতালের অনুসন্ধান করা হচ্ছে, তবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
ডা. দেবী শেঠি বলেন, মহামারির ধাক্কা সামলে ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম আগের অবস্থায় ফিরতে তিন থেকে ছয় মাস লাগতে পারে। তিনি বলেন, "ফ্লাইট পুনরায় চালু, দূতাবাসগুলোতে মেডিকেল ভিসা ইস্যু-এসব প্রক্রিয়াতে সময় লাগবে। বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরি ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। মেডিকেল ট্যুরিজমকে আগের গতিতে ফেরাতে ওইসব দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতের মহামারি পরিস্থিতিটিও গুরুত্বপূর্ণ"।