জামায়াতের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা ছেলের বক্তব্য, সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা এমপি প্রার্থী বাবার
জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় নিজের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান। নিজের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তবে তার ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান জানিয়েছেন, তিনি ২৫ বছর ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি করেন। নিজের দলের অবস্থান থেকেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে পারিবারিকভাবেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি 'বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে গৌরনদীর পাইলট স্কুল মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হুমায়ুন কবির। সমাবেশে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন জামায়াত প্রার্থীর ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান।
বক্তব্যে আরাফাত বিল্লাহ বলেন, 'আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে ওঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারা কি সেই বিমান ভ্রমণ করবেন?'
এ সময় জনসভা থেকে সমস্বরে 'না' উত্তর আসে। তখন আরাফাত বিল্লাহ খান আবার বলেন, 'কেন করবেন না? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স [অভিজ্ঞতা] নাই।'
ফেসবুকে বাবার ক্ষোভ ও সম্পর্কচ্ছেদ
ছেলের এই বক্তব্যের পর কামরুল ইসলাম খান ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন। প্রথমটিতে তিনি লেখেন, 'আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে গতকাল ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তাতে কেহ হতাশ হবেন না। আমি আজ চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দুই উপজেলার আমির, আসন পরিচালক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।'
এর কিছু পরেই দ্বিতীয় পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম খান বলেন, 'আমার ছেলের দেওয়া বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। ছেলেটার বক্তৃতায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পরিচয় দেওয়ার পরেই সে কথাটা বলেছে। এই কথাটা সে না বললেও পারতো।'
তিনি স্বীকার করেন, তার ছেলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পদেও ছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি জামায়াতের রাজনীতি করি। এজন্য আমার ছেলেও চাপে রয়েছেন। কারণ এই খবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলে শিবির করবে, আমার মতোই জামায়াতের নেতা হবে। কিন্তু তা না করে বিরোধী পক্ষের রাজনীতি করে আমাকে রাজনৈতিক ও মানসিক চাপে ফেলেছে।'
অন্যদিকে, পিতা-পুত্রের ভিন্ন দলের রাজনীতি নিয়ে পারিবারিকভাবে বিপাকে আছেন বলে জানান আরাফাত বিল্লাহ খানও। তিনি বলেন, 'আমি আমার পার্টির প্রতি দায়িত্ববান। বাবা জামায়াত করেন এটা তার পছন্দের বিষয়, আমি বিএনপি করি এটা আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত।'
আরাফাত আরও বলেন, 'আমি ছাত্রদল-যুবদল করে অবশেষে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খুব সচেতনভাবেই এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব উদারচিত্তের মানুষ। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি বিদ্বেষ আমি করি না। বাবা নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের যারা আছেন, তারা নানাভাবে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার মতো নয়।'
