বার্জার পেইন্টস তৃতীয় কারখানার জন্য বিনিয়োগ বাড়াল ১৬৭ কোটি টাকা
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের আসন্ন তৃতীয় উৎপাদন কারখানার জন্য বিনিয়োগ পরিকল্পনা সংশোধন করেছে। এর ফলে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ আগের ৮১৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর সময়সীমাও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি। গত ৩০ অক্টোবর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি মূল্য-সংবেদনশীল বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতি অনুযায়ী, নতুন এই কারখানার নির্মাণকাজ ২০২৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের পেইন্ট শিল্পে এটি অন্যতম বৃহৎ সম্প্রসারণ প্রকল্প। কারখানাটি ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ৪০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে।
বার্জার পেইন্টস ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রথম এই কারখানার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তখন আনুমানিক বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল ৪৮০ কোটি টাকা। পরে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা সংশোধন করে ৮১৩ কোটি টাকা করা হয়। সবশেষ তা বাড়িয়ে ৯৮০ কোটি টাকা করা হলো।
নতুন এই কারখানায় ডেকোরেটিভ পেইন্টস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোটিং, মেরিন পেইন্টস, উড কোটিং, কনস্ট্রাকশন কেমিক্যালস, অ্যাডহেসিভস (আঠা) ও অটোমোটিভ পেইন্টসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদিত হবে। বাংলাদেশের অবকাঠামো, শিল্প ও আবাসন খাতের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে এই পণ্যগুলোর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বর্তমানে বার্জার পেইন্টসের দুটি উৎপাদন কারখানা চালু আছে—একটি সাভারে, অপরটি চট্টগ্রামের কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায়। তৃতীয় কারখানাটি যুক্ত হলে কোম্পানিটির উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এটি ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ও পণ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য বার্জার পেইন্টস পুঁজিবাজার থেকে রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। প্রতিটি ১,১১০ টাকা মূল্যে (১,১০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ) মোট ২৭.২৮ লাখ রাইট শেয়ার ছাড়া হয়েছে। বাকি অর্থের জোগান কোম্পানির নিজস্ব উৎস থেকে আসবে।
রাইট শেয়ার ব্যবহারের এই সংশোধিত পরিকল্পনায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে কোম্পানির পর্ষদ আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করেছে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।
বার্জার পেইন্টস তাদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগের বছরের মন্দার পর ২০২৪-২৫ সালে পেইন্ট শিল্পে প্রায় ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ সামান্য পুনরুদ্ধার দেখা গেছে।
তবে খাতটি এখনও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বর্ধিত কর ও শুল্ক এবং বিলম্বিত অবকাঠামো প্রকল্পের মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। আবাসন ও বেসরকারি শিল্প উন্নয়নও ধীর হয়ে গেছে। এছাড়া সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়া, ঋণপত্র (এলসি) খোলার সীমাবদ্ধতা ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এই শিল্পকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পেইন্ট প্রস্তুতকারকরা উদ্ভাবনের ওপর জোর দিচ্ছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে তারা প্রিমিয়াম ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত নতুন পণ্য বাজারে আনছে এবং গ্রাহকসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে।
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর—এই ছয় মাসে বার্জার পেইন্টসের সমন্বিত রাজস্ব ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৩৩.৯৭ কোটি টাকা হয়েছে। তবে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে কাঁচামালের উচ্চমূল্য ও কর্পোরেট করহার বৃদ্ধির কারণে কোম্পানির সমন্বিত নিট মুনাফা ৩ শতাংশ কমে ১৪৮.৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
