জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ৪২ হাজার ৭৬১ ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯ কক্ষ নির্ধারণ ইসির
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি—যার মধ্যে পুরুষদের জন্য রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৭টি এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি কক্ষ।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, "আমরা আজ চূড়ান্তভাবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছি। মোট ৬৪টি জেলার ৩০০টি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১টি। কক্ষের হিসেবে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯।"
সচিব আরও জানান, অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি, যেখানে প্রায় ১২ হাজার ভোটকক্ষ থাকবে। তিনি বলেন, "একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটার থাকবে। এটি 'ক্যাচমেন্ট এরিয়া' হিসেবে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই সংখ্যা সামঞ্জস্য করা হবে।"
রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দুটি বিষয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে কমিশন।
তিনি বলেন, "আমাদের দুটি জায়গায় অগ্রগতি কিছুটা ধীর। একটি হলো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, অন্যটি পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন। ২২টি রাজনৈতিক দলকে আমরা প্রাথমিকভাবে বিবেচনাযোগ্য মনে করেছি। এদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, এই সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন করতে পারব।"
তিনি বলেন, "আমরা সামান্য পিছিয়ে আছি, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাকি সময়ের মধ্যেই সবকিছু কাভার করা সম্ভব হবে।"
পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, "দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যালোচনা চলছে। কিছু জায়গায় আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের তথ্য-সীমাবদ্ধতা পূরণ করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ। আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যেই পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও শেষ হবে।"
বিএনপির জোটবদ্ধ নির্বাচনে একক প্রতীক ব্যবহারের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, "এই বিষয়ে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।"
শাপলা প্রতীক সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন, "কমিশন ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। এখনও কমিশন আগের অবস্থায়ই আছে।"
আরপিও সংশোধনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে সচিব বলেন, "আরপিও সংশোধনের আগে কমিশন দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় দেখা যায়নি। তাই অনুমান নির্ভর মন্তব্য করা ঠিক হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "কমিশন আরপিও প্রস্তাবনাগুলো পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে— যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, যেগুলো ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য, যেগুলো রাজনৈতিক ঐক্যমত ছাড়া সম্ভব নয়,যেগুলো বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্তভাবে নির্ধারিত, এবং যেগুলো কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য মনে হয়েছে। এই পাঁচটি দিক বিবেচনা করেই সংশোধন প্রস্তাবনাটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে এবং তারা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।"
গণভোটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সচিব বলেন, "নির্বাচন কমিশনে এখনো পর্যন্ত কোনো গণভোট সম্পর্কিত তথ্য আসেনি। তাই অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। যে বিষয়টি কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।'
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, "এটা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করেছে। পুলিশ মামলা করেছে এবং তদন্ত করছে। যার কাজ, সে-ই করবে। কমিশন তার দায়িত্বেই মনোযোগ দিচ্ছে।"
নির্বাচন প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, "যদি শতকরা হিসেবে বলেন, তাহলে বলতে পারি আমরা এখন ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুত। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এই সপ্তাহে সম্পন্ন হলে প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে।"
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, "এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক বিষয় কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।"
