ডাকসুর পর জাকসুতেও ভূমিধস জয়, জিএস-সহ ২৫ পদের ২০টিতেই শিবির বিজয়ী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সমন্বিত প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম।
ভোটগ্রহণের দুদিন পর পর আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। প্রথমে ২১টি হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বা এজিএস (পুরুষ ও নারী) দুটি পদেই জয় পেয়েছে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা জয় পেয়েছেন।
এছাড়াও জাকসুর যেসব পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন, তারা হলেন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উবায়দা উসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক সাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, নাট্য সম্পাদক রুহুল ইসলাম, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মাহাদী হাসান, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আক্তার লুবনা, আইটি ও গ্রন্থাগার বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইমন লিখন, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক (পুরুষ) তৌহিদ হাসান, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন (নারী) নিগার সুলতানা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনী মোবারক ও পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক তানভীর রহমান।
এছাড়া জাকসুর ৬টি কার্যকরী সদস্য পদের ৫টিতেই জয় পেয়েছে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। তারা হলেন, ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা, তরিকুল ইসলাম ও আবু তালহা।
বাকি চারটি পদের মধ্যে দুটিতে পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দুটিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- সাংস্কৃতিক সম্পাদক জিসান আহমেদ ও ক্রীড়া সম্পাদক মাহমুদুল হাসান কিরণ। আর সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক পদে আহসান লাবিব ও কার্যকরী সদস্য হিসেবে মোহাম্মদ আলী চিশতী নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দুজন শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামে প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। ফল ঘোষণার কথা শুনে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন: জাকসুর ভিপি জিতু, জিএস মাজহার
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে জাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ওইদিন ভোট গণনা শুরু হয় রাত সোয়া ১০টায়। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় ৪৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ভোট গণনা শেষ হয়।
এর আগে কয়েক দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে ফল ঘোষণার সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সকাল থেকে চলে ভোট গণনা কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম গতকাল শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের জানান, রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গণনা সম্পন্ন করে বেসরকারিভাবে ফলাফল প্রকাশের আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জাকসুর ভিপি কে এই জিতু
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেছিলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি শুক্রবার রাতের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করতে। তবে নির্দিষ্ট সময় জানানো সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'আমাদের একজন সহকর্মীর মৃত্যুর পর ভোট গণনা প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছিল। আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে মিটিংয়ের পর ভোট গণনা শুরু হয়। আমরা ইতোমধ্যে হল সংসদের গণনা শেষ করেছি। এখন কেন্দ্রীয় সংসদের গণনা চলছে।'
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: পোলিং অফিসারের মৃত্যু; ভোট গণনা কক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মীরা
এবারের নির্বাচনে জাকসু ও হল সংসদের ৩৪০টি পদের বিপরীতে ৬২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে হল সংসদের ৩১৫টি পদের মধ্যে ১৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং ৬৮টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ১৩২ জন ছাত্র ও ৪৫ জন ছাত্রী। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়েছে ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ।