সচিবালয়ের সামনে জুলাই শহীদ পরিবার–আহতদের অবস্থান, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি

জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের একটি দল সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তারা অভিযোগ করছেন, জুলাইয়ের ঘটনার মামলার আসামীরা জামিন পাচ্ছে, কিন্তু বিচার হচ্ছে না। এ সময় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি করেন।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা একটি মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনে আসেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছেন।
এতে করে সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে সকাল সোয়া ১১টার দিকে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন।
এই অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েকজন জুলাই শহীদের বাবা, মা, ভাই, বোনসহ কয়েকজন আহত আন্দোলনকারী অংশ নেন। অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিরা স্লোগান দেন—'পদত্যাগ পদত্যাগ, পদত্যাগ চাই, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাই', 'দফা এক দাবি এক, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ', 'খুনিরা বাইরে ঘোরে, বিচার বিভাগ কী করে', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে', 'আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না'।
জুলাই শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা বুলবুল করিম বলেন, 'এক বছর পরেও আমরা আমার সন্তান হত্যার বিচার পাইনি। সরকার বিচারের নামে তামাশা করছে। আসামিরা অর্থের বিনিময়ে জামিন নিচ্ছে। অথচ আইন উপদেষ্টা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।'
শহীদ তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, 'আমরা এই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।' শহীদ শেখ শাহরিয়ারের বাবা আবদুল মতিন অভিযোগ করেন, বিচারের পরিবর্তে তাঁদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে।
জুলাই আহত আমিনুল ইসলাম বলেন, জুলাই আহত ব্যক্তিরা যদি আবার রাস্তায় নামেন, তাহলে পরিণাম ভালো হবে না। শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের একাধিকবার কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি বারবার সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় করেছেন। বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই।
দুপুরে শহীদ পরিবার ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
শহীদ আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ জুলাই শহীদ পরিবারকে বিশ্রীভাবে গালি দিয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি সেটা উল্লেখ করতে পারব না। আমাকে পুলিশ লাথি দিয়েছে। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে এখানে এসেছি।'
এ বিষয়ে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের দাবি তাঁরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তবে অবরোধের কারণে পথচারীদের ভোগান্তি বাড়ছে।'
পুলিশ আন্দোলনকারীদের আঘাত করেছে—এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এমনটি হলে আমরা যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেব।'
এদিকে, জুলাই হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের করা মামলায় পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যের জামিন পাওয়ার সঙ্গে আইন মন্ত্রনালয়ের কোন সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ দুপুরে আইন উপদেষ্টা তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেইজে এ কথা জানান।
তিনি লেখেন, 'জুলাই হত্যাকান্ডে শহীদ পরিবারের করা একটি মামলায় হাইকোর্ট পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যকে জামিন দিয়েছে। এটি নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিককারণেই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তবে এই জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রনালয়ের কোন সম্পর্ক নেই।'
'হাইকোর্ট দেশের উচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালত আইন মন্ত্রনালয়ের এখতিয়ারের অধীনে নয়। জামিন বা হাইকোর্টের অন্য কোন সিদ্ধান্তের সাথে তাই আইন মন্ত্রনালয়ের কোন সম্পর্ক নেই।'
'হাইকোর্ট উচ্চ আদালত হলেও তার সিদ্ধান্ত প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। এটর্নী জেনারেলের অফিস থেকে উপরোক্ত জামিনাদেশের বিরুদ্ধে তাই আপীল করা হয়েছে। কালই এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। জামিন বাতিল হলে পুলিশ উপরোক্ত আসামীকে গ্রেফতার করবে।'