বগুড়ায় গণশুনানিতে ‘কথা বলার সিরিয়াল না পেয়ে’ দুদক চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে জুতো নিক্ষেপ মাছচাষির

বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) গণশুনানি চলাকালে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে জুতো নিক্ষেপ করেন বলে উপস্থিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এদিন বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। দুদক চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে জুতো নিক্ষেপের পর তাৎক্ষণিকভাবে ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডলকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আবার তাকে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় এবং মঞ্চে ডেকে তার অভিযোগ শোনা হবে বলে জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আর মঞ্চে ডাকা হয়নি।
ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডলের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। পেশায় তিনি একজন মাছচাষি।
জুতো নিক্ষেপের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আজকের গণশুনানিতে আমার অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনোভাবে কথা বলার সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। তাই জুতো মেরেছি। যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলার সুযোগ পাই। এতে আমার যে শাস্তি হয় হবে। কথা বলার সুযোগ না পেলে জুতো মারতে পেরেছি, এটাই আমার তৃপ্তি হবে। এজন্য জুতো মেরেছি।'
নিজের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন জায়গায় তিনি পুকুর এবং বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। তিনি কুড়িগ্রামে ১৪ বছর এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ বছর মাছ চাষ করেছেন। এরপর ২০১২ সালে সোনাতলার গারামারা গ্রামের তিনটি বিল ও তিনটি পুকুর ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বছর প্রতি লিজ নিয়ে ২১ লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ করেন।
তিনি বলেন, 'তৎকালীন সোনাতলা-সারিয়াকান্দি আসনের এমপি তার শ্যালক লিটনকে স্থানীয় শালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভোটপ্রথা তুলে দিয়ে সভাপতি বানাতে চেয়েছিলেন। এতে চারটি গ্রামের মানুষ আপত্তি জানালেও এমপির সামনে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। কিন্তু আমি এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। এ কারণে এমপির শ্যালক ২০১৫ সালের ১৭ মে আমার মাছের খামার দখল করে নেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এরপর থেকে আমি থানায়, এসপি, ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি বিচারের জন্য। ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের আরো কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার পাইনি। সব জায়গায় থেকে অসহযোগিতা পেয়েছি। এ কারণে আমার ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।'
তবে জুতো নিক্ষেপের ঘটনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'জুতো নিক্ষেপের ঘটনা কোথায় ঘটেছে? আমি তো এরকম কিছু শুনিনি। সাংবাদিকের কাজ হলো তথ্য নিশ্চিত হওয়া। আপনি সাংবাদিকই যদি এরকম কথা বলেন, সাংবাদিকই যদি এরকম প্ররোচনা দেন, তাহলে কি হলো?'
গণশুনানিতে উপস্থিত একুশে টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'ছাকোয়াত হোসেন তার পাশেই ছিলেন। তিনি হঠাৎ করে তার দুটো কালো রঙের জুতো নিক্ষেপ করেন। এরপর দুদকের লোকজন তাকে হল থেকে বের করে দেয়। পরে আবারও তাকে ভেতরে বসতে দেয়। এটা আমি দেখেছি।'
উল্লেখ্য, বগুড়ায় সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করে দুদক। এতে মোট ৩২টি দপ্তরের বিরুদ্ধে ৯৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৫৭টি অভিযোগের শুনানি করা হয়।
ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত দুই কর্মকর্তাকে আটক করা ছাড়াও অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ায় পদ্মা ইন্সুরেন্সের স্থানীয় এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান।
এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চার লেন প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বাঙালি নদী খনন প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুদকের ভেতরেও দুর্নীতি আছে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান। জনগণের সহযোগিতায় এগুলো ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।