পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালালে মস্কোতে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর একটি বেসরকারি অনুদান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে সমর্থকদের বলেছিলেন, ইউক্রেনে হামলা চালালে 'মস্কোকে বোমা মেরে ছারখার' করে দেবেন বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হুমকি দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক অডিও বক্তব্যে এ কথা বলেছেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প ওই অডিওতে বলেন, 'পুতিনকে আমি বলেছিলাম, "তুমি যদি ইউক্রেনে ঢোকো, আমি মস্কোকে বোমা মেরে ছারখার করে দেব। আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।" তখন পুতিন বলেছিল, "আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।" কিন্তু সে আমাকে ১০ শতাংশ বিশ্বাস করেছিল।'
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও তিনি একই ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন—তাইওয়ানে হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ে বোমা ফেলবে।
ট্রাম্প বলেন, শি তাকে 'পাগল' ভাবতেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, 'আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।'
এই মন্তব্যগুলো ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য সমর্থকদের কাছে সমর্থন চাইতে গিয়ে করেছিলেন। ২০২৪ সালে নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় আয়োজিত অনুদান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে এসব কথা রেকর্ড করা হয়। পরে সাংআদিক জশ ডসি, টাইলার পেজার ও আইজ্যাক আর্নসডর্ফ এই অডিওগুলো সংগ্রহ করেন এবং তাদের নতুন বই "২০২৪"-এ এসব কথোপকথনের বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এই অডিও আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। ট্রাম্পের প্রচার শিবির এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই অডিওগুলোতে দেখা যায়, ধনী অনুদানদাতাদের কাছে ট্রাম্প নিজের আরেকটি খোলামেলা দিক তুলে ধরেছেন—যেখানে তিনি শুধু তার আক্রমণাত্মক বিদেশনীতি নয়, বরং ছাত্র বিক্ষোভকারীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া এবং 'ওয়েলফেয়ার সুবিধা' নেওয়া মানুষদের সবসময় ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা নিয়েও কথা বলেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার অতীত কথোপকথনের উদাহরণ দিয়ে তিনি যুক্তি দিচ্ছেন যে, যদি জো বাইডেনের পরিবর্তে তিনি প্রেসিডেন্ট হতেন, তাহলে ইউক্রেন ও গাজার সংঘাত এড়ানো যেত। এই দাবি তিনি বারবার করে আসছেন। তিনি সবসময়ই বাইডেনকে এই দুই যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দোষারোপ করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও পুতিনের শান্তি চুক্তিতে রাজি না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অভিযোগ করেন যে, রুশ নেতা যুক্তরাষ্ট্রকে 'অনেক বাজে কথা' শোনাচ্ছেন।
ক্যাবিনেট বৈঠকে তিনি বলেন, 'আমি পুতিনের ওপর খুশি নই। আমি তাদের ওপর খুবই অসন্তুষ্ট।'
অনুদান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে এক দাতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিছু ছাত্র বিক্ষোভকারী একদিন দেশ চালাবে। তখন ট্রাম্প উপস্থিতদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, তাকে নির্বাচনে জেতাতে যেন আরও উদারভাবে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, 'আপনারা যদি আমাকে জেতাতে পারেন, তাহলে আমি ওই আন্দোলনকে ২৫ থেকে ৩০ বছর পেছনে ঠেলে দেব।'
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছেন, যার ফলে হোয়াইট হাউস ও আদালতের মধ্যে প্রশাসনের গণবহিষ্কার অভিযান নিয়ে একের পর এক আইনি লড়াই শুরু হয় — এর মধ্যে ছাত্র ভিসা বাতিলের চেষ্টাও ছিল, যাতে বিদেশি ছাত্রদেরও বহিষ্কার করা হয়।
আরেকটি অনুদান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প উপস্থিতদের আরও বেশি অর্থ সহায়তা দিতে আহ্বান জানান, কারণ তার মতে রিপাবলিকানরা একটি বড় সুবিধাহীন অবস্থায় রয়েছে—'ওয়েলফেয়ার সুবিধাভোগীরা সবসময় ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয়।'
তিনি বলেন, 'ইউনিয়নগুলো বড় অঙ্কের টাকা দেয়, সিভিল সার্ভিসের লোকজনও বড় অঙ্কের টাকা দেয়, আর তাদের কাছে ওয়েলফেয়ারের সুবিধা আছে।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমার ইহুদি বন্ধুদের কাছে একটাই কথা—আপনারা তাদের রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।'
ওই একই অনুদান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প গর্ব করে বলেন, এক ধনী দাতা তাকে লাঞ্চের বদলে ১০ লাখ ডলার দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে রাজি করিয়েছিলেন সেই অঙ্ক ২৫ মিলিয়ন ডলারে বাড়াতে।
ট্রাম্প বলেন, 'আর সে করেছেও, সে আমাকে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এটা সত্যিই পাগলামি।'
তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প আরও দাবি করেন, এভাবে তিনি অন্য অনেককেই তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বেশি অনুদান দিতে রাজি করিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আপনাকে সাহস করে চাইতে হবে। তাদের এমন মানসিকতায় আনতে হবে।'