পরিবেশ দূষণকারী কারখানার ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি ৪ সংগঠনের

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লবনদহ নদী দখল ও দূষণকারী একটি সিরামিক কারখানাকে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড' দেওয়ার প্রতিবাদে এবং এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয়েল উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে চারটি পরিবেশবাদী সংগঠন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে দেওয়া এ স্মারকলিপি সোমবার (৭ জুলাই) শ্রীপুরের ইউএনও গ্রহণ করেছেন।
স্মারকলিপি দেওয়া সংগঠনগুলো হলো-বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, শ্রীপুর শাখা, রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশন, শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ এবং শ্রীপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি।
শ্রীপুরের ইউএনও ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। আমি সেটি গ্রহণ করেছি। এখন সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।'
স্মারকলিপিতে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, লবলং নদী দখল ও দূষণ করা এবং হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি নষ্টের পরও এক্স সিরামিক্স নামক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে গ্রিন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া প্রসঙ্গে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের শ্রীপুরের কৃষিজ সম্পদ, ভূগর্ভস্থ পানি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের আঁধার লবলং নদীটিকে ইচ্ছেকৃতভাবে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে মেরে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলো নদী হত্যার সঙ্গে সবচেয়ে নিবীরভাবে জড়িত তার মধ্যে অন্যতম এক্স সিরামিক্স।
বলা হয়েছে, প্রথমে তারা নদীকে দুই দিক থেকে ঘিরে ধরে চাপা করে দিয়েছে। অপরিশোধিত বালি জাতীয় বর্জ্য প্রতিনিয়ত ফেলায় নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করেছে। যার ফলে উজানে হাজার বিঘার উপর জমি তলিয়ে গেছে দূষিত পানিতে।
আরও বলা হয়েছে, এখানে কয়েকবার এসেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। এই কোম্পানির নামে বেলা'র মামলা ছিল। কিছুদিন আগেও পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব মহোদয়। পরিবেশ অধিদপ্তর অনেকদিন তাদের লাইসেন্স রিনিউ করে দেননি পরিবেশ দূষণের কারণে। পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রমাণও পেয়েছে প্রত্যেকটি কর্তৃপক্ষ।
স্মরকলিপিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে পরিবেশ উপদেষ্টাও এ বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে অবগত। যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নদী দখলের সঙ্গে জড়িত সে প্রতিষ্ঠানের তালিকাতেও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের নাম।
বলা হয়, পরিবেশ বিষয়ক এত অভিযোগ থাকার পরও যখন কোনো প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার পায়, তখন পরিবেশতো হুমকির মুখে পড়বেই। সঙ্গে সঙ্গে মনোবল হারাবে যারা পরিবেশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজে তারা এবং এর ফলাফল হবে ভয়ংকর।
আরও বলা হয়, কারণ বর্তমান সময়েই এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্হ পানি, চাষাবাদ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য সবই হুমকির মুখে। সুতরাং আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করে বলতে চাই, এ ধরনের পুরস্কারের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং পুরস্কার পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা একটি শিল্পোন্নত দেশ চাই। কোনো নির্দিষ্ট শিল্প কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অবস্থান নেই। যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পক্ষ থেকে পরিবেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তারাই সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হোক।
আশা করি বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধিত করবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ মোট ১০ জন পরিবেশবাদী বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, শ্রীপুর শাখার সভাপতি আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, 'আমরা দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে লবনদহ নদীটি রক্ষার জন্য আন্দোলন, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টার ঐকান্তিক চেষ্টা লবনদহ নদীটি পুনর্জীবনদানের জন্য সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদী খননসহ একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এমন সময়ে এ নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মামনা দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এজন্য আমরা চাই এ সম্মাননা প্রত্যাহার করা হোক। যাতে পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট বার্তা পায়।'