মৌলিক সংস্কার বিএনপি ও তার সমমনা দলের জন্য আটকে আছে: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন অভিযোগ করেছেন, বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর কারণে মৌলিক সংস্কার আটকে আছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের বিষয়ে দলটি সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। অন্যদিকে আলোচনার অগ্রগতি ও জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত কমিশন-ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
দ্বিতীয় দফা সংলাপের সপ্তম দিনে ৩০টি দলের সাথে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।
আখতার হোসেন বলেন, "মৌলিক সংস্কারের জায়গাটা বিএনপি ও তার সমমনা দলের জন্য আটকে আছে। ঐকমত্য কমিশন তাদের আহবান করেছে পুনর্বিবেচনা করার জন্য এসব প্রস্তাবনা। আমরাও আহবান জানাতে চাই। এত মানুষের রক্তের মধ্যে দিয়েই—নতুন বাংলাদেশে একটি দল ইচ্ছেমতো তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করবে, বিরোধীমতকে দমন করবে—এমন পরিস্থিতি যারা তৈরি করছে, তাদের সাথে জনতা একাত্ম হতে পারে না। জনগণের বৃহত্তর অংশ এই রুমের বাইরে অপেক্ষা করছে, তারা দেখছে কোন দল মৌলিক সংস্কার চাচ্ছে অথবা চাচ্ছে না।"
আজ রোববার (২৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ।
এসময় আখতার হোসেন বলেন, ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে। সেখানে যখন একটি পাওয়ার পার্টি বা বিএনপি একটি বিষয়ে ছাড় দেয়; তখন তাদের একটি দলীয় বিষয়ে ছাড় দেয় – এরকম মনে হয়। আর আমরা যারা সংস্কারের পক্ষের শক্তি, তারা ছাড় দিলে গোটা জাতির স্বার্থে ছাড় পড়ে যায়।
তিনি বলেন, আজকের আলোচনাতেও মৌলিক সংষ্কারের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়েছে। প্রথমে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল প্রস্তাব করা হলে নামের ভারিক্কির কারণে সেটি বাদ দেওয়া হলো। পরে নাম পরিবর্তন করে সেটিকে নিয়োগ কমিটি করা হলেও – বিএনপি ও তার গুটিকয়েক দলের বাধার কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
সংসদের উচ্চকক্ষের আলোচনার বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, প্রায় সব দল উচ্চকক্ষে সংখ্যা অনুপাতে প্রতিনিধিত্বের কথা বললেও বাধার মুখে পড়েছে। সংবিধান সংশোধন যেন একদল করতে না পারে, এজন্য উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের কথা বলা হলেও বিএনপি সমর্থন করেনি।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম এই তরুণ নেতা বলেন, জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিগুলো গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঘোষণাপত্রের দাবি জানিয়ে আসছে। এরপর কয়েক দফায় আন্দোলন করা হলেও সরকারের তরফ থেকে ঘোষণাপত্র জারির কোন উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি। সরকার জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র না দিলে—আমরা জুলাইয়ের সকল পক্ষের শক্তিকে নিয়ে ৩ আগস্ট জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র পাঠ করব।
কমিশনের আলোচনার মাঝে এই ঘোষণার ব্যাপারে আখতার হোসেন বলেন, ঐক্যমত কমিশনের আলোচনা সংস্কার নিয়ে। মৌলিক সংস্কারের ঐক্যমত নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা এই কমিশনের কাজ। জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। ঘোষণাপত্র হচ্ছে ২৪ এর অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দেওয়ার একটা দলিল। এটা একটা পৃথক ডকুমেন্ট। সেটার সাথে জুলাই সনদ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত নয়।
জুলাই সনদের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছি- সালাউদ্দিন আহমেদ
এদিকে জুলাই সনদ ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এভাবে আর কতদিন আলোচনা হবে সেটাই দেখার বিষয়। জুলাই সনদের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছি। আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ, মূলনীতি নিয়ে একমত হয়েছি। স্থায়ী কমিটি নিয়েও রাজি হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের ক্ষেত্রেও একমত হয়্রছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও গোপন ভোটের ব্যাপারেও একমত হয়েছি। এখন শতভাগ একমত হতে হলে; কিংবা যদি বাধ্য করা হয়—তাহলে সেটি সঠিক নয়।