সফলতার জন্য অল্প সময়ে অধিক লোককে ভ্যাকসিন দিতে হবে

ভ্যাকসিন প্রয়োগের সফলতা পেতে হলে অল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে হবে। কারণ, একেকটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট হার্ড ইমিউনিটির একটা মেয়াদ থাকে। ধীরগতিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তদের মধ্যে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, অন্যদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরির আগেই তা শেষ হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নিতে হয়। কারণ, বছর বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার ধরণ পরিবর্তন হয়। করোনা ভাইরাসও দ্রুত রূপ বদলাচ্ছে। তাই কয়েক বছর ধরে কোভিডের একই ভ্যাকসিন প্রয়োগে সুফল মিলবে না। এক ধরণের ভ্যাকসিন দিতে দিতেই নতুন ধরণের করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। অন্তত মাসে এক কোটি ভ্যাকসিন বা ৫০ লাখ মানুষকে দুই ডোজ করে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
আমাদের ইপিআই ৫-৬ সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন হ্যান্ডেল করতে পারে। এর থেকে বেশি ভ্যাকসিন এলে তারা হ্যান্ডেল করতে পারবে না। তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে ২০২১ সাল জুড়ে তাদের পক্ষে ৯০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দিতে পারবে। এই সক্ষমতা নিয়ে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে চার-পাঁচ বছর লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি এমন হলে কোন সুফল মিলবে না।
তাই ভ্যাকসিনেশনের বিদ্যমান ঘাটতি মেটাতে এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে, ঢাকায় ভ্যাকসিন নেওয়ার মতো লোক পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্য অনেক জেলায় ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না। কারণ, অনেক জেলাতেই ভ্যাকসিনের কোল্ডচেইন, স্টোরেজ ক্যাপাসিটি নেই।
এক সঙ্গে সব জেলায় ভ্যাকসিন দিতে না পারলে তা হার্ড ইমিউনিটি তৈরিতে কোন কাজে লাগবে না। যেসব জেলায় পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে না, সেখানে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে পারবে, যা পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়বে। শুরুতে অন্তত সকল জেলা শহর পর্যায়ে একযোগে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হবে, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরের নরমাল অংশেই রাখা সম্ভব। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত ফ্রিজারের নরমাল অংশে সাধারণত ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যবহার হয়। আর সাধারণ ফ্রিজারের ডিপ অংশে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। মর্ডানার ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা সম্ভব।
ফাইজারের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ ধরণের ভ্যাকসিন সংরক্ষণে আল্ট্রা-লো ফ্রিজার দরকার হয়। এ ধরণের ফ্রিজার ইপিআইতে নেই। আইসিডিডিআরবি ও বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল মিলে বাংলাদেশে বড়জোড় শ খানেক এ ধরণের ফ্রিজার আছে।
- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আবুল কাশেমকে ফোনে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন।