সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে: গুতেরেস

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফর শেষে রোববার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন। বিদায়ের আগে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে।
আজ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার বিমান ছাড়ে। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান প্রধান উপদেষ্টার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান।
ঢাকা ছাড়ার আগে গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং বিদায়ী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে জানিয়েছেন উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সফরকালে গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক সংস্কারকে স্বাগত জানান।
তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করেন। এছাড়া, গুতেরেস ঢাকায় একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন, যেখানে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশি তরুণ প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
গত ১৩ মার্চ ঢাকা সফরে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে গুতেরেস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শান্তিরক্ষী বাহিনী সরবরাহকারী দেশ।
'বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই,' বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
একই সঙ্গে, এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের মহানুভবতারও প্রশংসা করেন তিনি।
'আপনারা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা বিশ্বের অনুসরণ করা উচিত,' বলেন গুতেরেস।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সমাজ তখনই শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হয়, যখন সবাই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত শোনার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গুতেরেস।
তিনি বাংলাদেশের তরুণদের নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করে বলেন, 'তাদের সাম্য, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতি অঙ্গীকার অনুপ্রেরণাদায়ক। এটি বৈশ্বিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ন্যায়ের আন্দোলনকে শক্তিশালী করছে।'
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, দেশটি বর্তমানে একটি 'গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের' মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'এটি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আপনাদের ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে সহযোগিতা করা,' বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বাংলাদেশের চলমান সংস্কার ও রূপান্তরের পথে জাতিসংঘের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমরা পাশে থাকব।'
'বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টেকসই ও সমতাভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসংঘ আপনাদের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে,' বলেন গুতেরেস।