৬ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে বাড়ি ফেরার অনুমতি মিলছে উত্তর গাজাবাসীর

হামাস এই সপ্তাহে ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল সোমবার থেকে গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের তাদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। খবর বিবিসির।
ছয় জিম্মি ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন আরবেল ইয়েহুদ নামে এক বেসামরিক ব্যক্তি। তার মুক্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কের কারণে ইসরায়েল গাজাবাসীদের উত্তরে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্ব করেছে।
হামাস গত শনিবার চারজন সেনা সদস্যকে মুক্তি দিয়েছে। তবে আরবেল ইয়েহুদকে মুক্তি দেয়নি। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের আগে মুক্তি দেয়নি। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার শর্ত ছিল।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতজন জিম্মি এবং প্রায় ৩০০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
উত্তর গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি গত দুই দিন ধরে সামরিক ব্যারিকেডে আটকে রয়েছেন। যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই দফা বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে।

তৃতীয় দফায়, হামাস বৃহস্পতিবার আরবেল ইয়েহুদসহ আরও দুইজন জিম্মি ব্যক্তিকে মুক্তি দেবে। এরপর শনিবার আরও তিনজনকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং মধ্যস্থতাকারী কাতার।
সোমবার থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের উত্তরের দিকে যাওয়ার অনুমতি দেবে এবং সপ্তাহের শেষে আরও ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের শনিবার নেটজারিম করিডোরের উত্তরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কথা ছিল। নেটজারিম করিডোর সাত কিলোমিটার (৪.৩ মাইল) দীর্ঘ একটি এলাকা, যা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি উত্তর গাজাকে বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
গতকাল রোববার চেকপয়েন্টে নিরিম মুসাবেহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, "আমরা রাস্তায় ঘুমাচ্ছি। আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না। আর যখনই চেষ্টা করি, আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।" ৪২ বছর বয়সী মুসাবেহ গাজার কেন্দ্রস্থল দেইর আল-বালাহ থেকে এসেছেন, তবে তিনি দক্ষিণের শেজাইয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
দিয়াব শেহবারি জানান, তিনি শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা থেকে চেকপয়েন্টে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, "সারারাত ঠান্ডায় বাচ্চারা চিৎকার করছিল। আমরা আগুন জ্বালিয়ে তাদের ঢেকে দিয়েছি।"
ইসরায়েল এখন ঘোষণা দিয়েছে, "সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে উত্তর গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে এবং দুই ঘণ্টা পর যানবাহনেও চলাচল করতে পারবে।"
ইয়েহুদের বিষযয়ে চলমান বিরোধ মীমাংসার পর এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশরের কর্মকর্তারা বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখেন। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার আগে এই অগ্রগতির কথা জানান।
ইসরায়েল মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হামাসের কাছ থেকে ইয়েহুদের জীবিত থাকার প্রমাণ চেয়েছিল। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় এই প্রমাণ মিশরীয়দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে রবিবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে ধ্বংসস্তূপ আখ্যা দিয়ে মিশর ও জর্ডানকে গাজার ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানান।
হামাস এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ উভয়েই এই প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে এবং জর্ডান ও মিশরও এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এ যুদ্ধ। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ মারা গেছেন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৪৭,২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।