তত্ত্বাবধায়ক সরকার: যেভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল হাসিনা

সুপ্রিম কোর্টের বিভক্ত রায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে 'অবৈধ' ঘোষণা করলেও, 'রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য' দুটি সংসদ নির্বাচন আয়োজনে এই ব্যবস্থা চালু রাখার অনুমতি দিয়েছিল।
সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব তৈরি করতে হাউজ কর্তৃক গঠিত ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় বিশেষ কমিটি সর্বসম্মতভাবে শীর্ষ আদালতের রায়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে এই ব্যবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যা পরবর্তীতে নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
২০১১ সালের ৩০ মে দুপুরে বিশেষ কমিটির সদস্যরা সংসদ ভবনে এসে তাদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার আগে হাসিনার অফিসে তার পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন। তখন, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার বিষয়ে কমিটির প্রস্তাবের একটি অংশে 'না' বলেন।
একজন বিশেষ কমিটির সদস্য সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেন, 'আমরা শীর্ষ আদালতের রায়কে সম্মান করতে চাই। কেন আমরা রায়ের অবমাননা করব?'।
শেখ হাসিনা একদিকে শীর্ষ আদালতের রায় মেনে নেন, তবে অন্যদিকে যে অংশে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা উপেক্ষা করেন।
তিনি রায়ের আংশিক বাস্তবায়ন বেছে নেন, যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয় এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেন।
২০১১ সালের জুনে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, যা একটি সুরক্ষিত বিষয় ছিল। হাসিনা তার সরকার অধীনে তিনটি পরিকল্পিত নির্বাচন পরিচালনা করেন।
বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দল ২০১৪ ও ২০২৪ সালে দুটি নির্বাচন বয়কট করে। তবে, ২০১৮ সালে হাসিনা ন্যায্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলে বিএনপি তাতে অংশ নেয়। কিন্তু, নির্বাচনের আগের রাতে ভোট জালিয়াতি করা হয় এবং এখন সেটি "মধ্যরাতের নির্বাচন" নামে পরিচিত।
বিষয়গুলো কীভাবে উন্মোচিত হলো
২০১০ সালের জুলাই মাসে সংসদে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু তখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনও ইস্যু ছিল না।
কমিটিকে সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি রায়ের ভিত্তিতে প্রস্তাব তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যেখানে ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হয়েছিল। এই সংশোধনীটি ১৯৭৫ সালের আগস্টে ক্ষমতার রক্তাক্ত পরিবর্তনের পর সামরিক শাসনামলে সংবিধানে আনা অনেক হঠাৎ পরিবর্তনকে বৈধতা দিয়েছিল।
বিএনপির সংসদ সদস্যরা এই বিশেষ কমিটিতে যোগ দেননি, কারণ তারা জানতেন, সংবিধানে বেশিরভাগ পরিবর্তনই তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথম সামরিক শাসনামলে করেছিলেন এবং কমিটি এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে কাজ করবে।
একমাসের মধ্যে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি সাত মাস ধরে প্রস্তাব তৈরির কাজ করে।
বিশেষ সংসদীয় কমিটিতে যোগ দেওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি মুস্তফা কামাল, মোহাম্মদ ফজলুল করিম এবং তফাজ্জল ইসলাম সহ কয়েকজন প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেননি।
তবে তারা প্রস্তাব করেছিলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করার বিধানটি বাতিল করা হোক। কারণ তাদের মতে, এটি বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করেছিল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
কিন্তু, ২০১১ সালের মে মাসে হঠাৎ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে [তার অবসরের ঠিক আগের দুই সপ্তাহের মধ্যে] তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা ১৩তম সংশোধনীকে "অবৈধ" ঘোষণা করে।
এটি লক্ষণীয়, সুপ্রিম কোর্টে ১৩তম সংশোধনী মামলার শুনানির সময় অধিকাংশ বিখ্যাত আইনবিদ [যাদের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল] আদালতকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বেঞ্চের তিনজন শীর্ষ বিচারপতি এই মতের সঙ্গে একমত হন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রক্ষার পক্ষে দৃঢ়ভাবে যুক্তি পেশ করেন। তারা বলেন, এই ব্যবস্থায় কোনো বৈধতার সংকট ছিল না।
অন্য তিনজন বিচারপতি একমত হননি। এরপর, প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তার সিদ্ধান্তমূলক ভোট দেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সংবিধানিক প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
ভিন্নমতের রায় যা বলে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা 'অবৈধ' ঘোষণা করতে বিচারপতি খায়রুল হক যে একমাত্র যুক্তি দিয়েছিলেন তা হলো, অনির্বাচিত লোকেরা এক মুহূর্তের জন্যও নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে না। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছিলেন। তার সঙ্গে তিনজন বিচারপতি একমত ছিলেন।
কিন্তু, ভিন্ন মতামত দেওয়া অন্য তিনজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি পেশ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা 'অবৈধ' ঘোষণা করার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য।
তিনি বলেন, "এটি গণতন্ত্রের সহায়ক, ধ্বংসকারী নয়। এটি একটি জনপ্রিয় দাবি ছিল। জনগণ এটি মেনে নিয়েছে। এটি দেশের জনগণের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য। এটি পুরোপুরি সাংবিধানিক।"
তিনি আরও বলেন, "স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। যতক্ষণ না মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা হয়, ততক্ষণ গণতন্ত্র বাঁচতে পারবে না।"
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংস্কৃতি নির্বাচনের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
বিচারপতি আবদুল হাবিব মিয়া তার রায়ে বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শত্রুতা এবং বিরোধিতার মনোভাব এত বেশি যে, সংসদে সরকারপক্ষের নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া একে অপরের সঙ্গে বসতে বা জাতীয় অনুষ্ঠানেও দেখা করতে রাজি হন না।"
তিনি বলেন, "যতদিন এ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকবে, ততদিন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে সাধারণ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং বর্তমানে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য একমাত্র বিকল্প নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার।"
তিনি আরও বলেন, এভাবে যদি নির্বাচন পরিচালিত হয়, তাহলে অর্থ এবং শক্তি নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। ক্ষমতাসীন দল সরকারি কাঠামো ব্যবহার করে নির্বাচনে কারচুপি এবং ফলাফল প্রভাবিত করবে। এর ফলে গণতন্ত্র আবারো দুর্বল হয়ে যাবে এবং জনগণের ক্ষমতা কোথাও দেখা যাবে না।
বিচারপতি ওয়াহাব বলেন, 'সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে যা বলা আছে, "গণপ্রজাতন্ত্রের সমস্ত ক্ষমতা জনগণের'– এটি একটি উপহাস হবে যদি জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ না পায়, অর্থাৎ তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে না পারে; ১৩তম সংশোধনী জনগণের এই অধিকার নিশ্চিত করেছে..."
তিনি আরও বলেন, "এক বা দুটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করলেও কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত হবে না।"
বিচারপতি বলেন, "তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে নির্বাচনে অসাংবিধানিক প্রভাব পড়বে, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি ক্ষুণ্ন করবে।"
তিনি বলেন, "আমরা দুটি বিষয়কে ভুলভাবে মেলাতে পারি না– গণতন্ত্র এবং পার্লামেন্ট। সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত নির্বাচন গণতন্ত্রের অংশ এবং সংবিধানের একটি মৌলিক অবকাঠামো। আর পার্লামেন্ট হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি ফলাফল, যা সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত।"
তিনি বলেন, 'তাহলে, যদি সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত নির্বাচন না হয়, তবে পার্লামেন্টের প্রকৃত বৈধতা থাকবে না এবং সেই পার্লামেন্টে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। যদি পার্লামেন্টের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হন এবং জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব না করে, আমাদের সেটির প্রতি অতিরিক্ত মায়া বা আগ্রহ দেখানো উচিত নয়।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষপাতী সর্বোচ্চ আদালতের আরেক বিচারপতি ইমাম আলী বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের সময় অসম প্রভাব বিস্তার করবে না, এমনটি আশা করা যায় না। এর জন্য, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট।'
এছাড়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়ার মতামতের সাথে একমত হন।
বিচারকরা আদালতকে যা পরামর্শ দিয়েছেন
যেসব সিনিয়র আইনজীবীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলায় সর্বোচ্চ আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করতে আমিকাস কিউরি (পরামর্শদাতা) হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, তারা আদালতকে এই ব্যবস্থা বজায় রাখার পরামর্শ দেন।
তারা যুক্তি দেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, কারণ এটি জনগণের আন্দোলনের ফলস্বরূপ এবং জনগণ এটি গ্রহণ করেছে। সর্বোপরি, এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিতর্কের একটি সমাধান দিয়েছে, যে, সংসদীয় নির্বাচনের সময় কে সরকারে থাকবে।
তারা সতর্ক করে দেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যদি বাতিল করা হয়, তাহলে দেশে আবার রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে, কারণ বিরোধী দলগুলো একটি পক্ষদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না, যেটি স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদালতে বলেন, যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তবুও যদি এটি বাতিল করা হয়, তাহলে আবার এক এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা চালু রাখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, যদি সর্বোচ্চ আদালত এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং দেশে আবার ১৯৯৬ সালের মতো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে —যখন আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু করতে বাধ্য হয়েছিল।
ব্যারিস্টার এম. আমির-উল ইসলাম বলেছেন, শুধু নির্বাচন আয়োজন করলেই নির্বাচনের ফলাফল বৈধতা পাবে না, যতক্ষণ না নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়।
তিনি বলেন, 'আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখায় যে, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ছিল না এবং জনগণ—যারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, তাদের ভোট জোর-জবরদস্তি এবং টাকার মাধ্যমে হাইজ্যাক করা হয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোনোভাবেই গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, সুতরাং এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, সংবিধানের কোনো ধারার সাংবিধানিকতা নির্ধারণ করার আগে, সেই ধারা পাশ করার পেছনের কারণ এবং প্রেক্ষাপট দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বহির্ভূত ঘোষণা করা হলে সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা দেখার দায়িত্ব আপিল বিভাগের।
তিনি আরও বলেন, যদি ত্রয়োদশ সংশোধনী আজ অবৈধ ঘোষণা করা হয়, তবে প্রায় নিশ্চিত যে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং তাতে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে; যদিও সংশোধনীটির ধারাগুলো প্রতিনিধিত্বশীল সরকারকে সাময়িকভাবে স্থগিত করে, তবুও এটি দেশের গণতন্ত্রের চলমানতা নিশ্চিত করে।
'যদি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়, তবে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন একটি কাল্পনিক ব্যাপার হয়ে থাকবে এবং এর ফলে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়বে। আমাদের দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে', যোগ করেন তিনি।
যদিও, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলার শুনানির সময় তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবী আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সরকার রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের চাপে বাধ্য হয়েছিল।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক পরিবর্তনগুলো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর কারণে ঘটেছিল এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল, বিশেষ করে মাগুরা-২ উপনির্বাচন এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অধীনে অতীতের অন্যান্য নির্বাচনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে।
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের প্রজাতন্ত্র চরিত্র শুধুমাত্র তখনই হারানো হয় যখন কোনো স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসে। ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায়, সংবিধান এবং দেশের প্রজাতন্ত্র চরিত্র নষ্ট হয়নি, বরং এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে; রাষ্ট্রপতি, যিনি নির্বাচিত ব্যক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে থাকেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে যৌথভাবে দায়ী থাকে, তাই বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্র চরিত্র একেবারে অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
তিনি ভারতীয় সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে যে কোনো রাজ্যে শাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা রয়েছে, এবং প্রকৃতপক্ষে, অতীতে ভারতের কিছু রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন প্রয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র নষ্ট হয়নি।
তবে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এসব আবেদন ও যুক্তির সাথে একমত হননি। ২০১১ সালের ১০ মে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে তা অবৈধ ঘোষণা করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন না করে তার অংশবিশেষ কার্যকর করেন এবং নির্বাচনী সময়কালের সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য বিশেষ সংসদীয় কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করেন।
এরপরের ফলাফল ছিল বিপজ্জনক। সংবিধানের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ক্ষুন্ন হয়েছিল। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন এবং ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্র পদদলিত হয়, যা একটি স্বৈরাচারী শাসনের জন্ম দেয়।
ইংরেজি থেকে অনূদিত। মূল লেখা:
Caretaker govt: How Hasina killed a system that ensured free and fair elections