উইন্ডোজ ১১ আপডেট নিয়ে বিভ্রান্তি: ৪০ কোটি ব্যবহারকারীকে সতর্কতা

মাইক্রোসফট আপডেট নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ 'প্যাচ টুয়েসডে'তে প্রকাশিত আপডেটে কোম্পানিটি ৪০ কোটি ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে জানায়, তাদের পিসি আপডেট করলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আপডেট পাওয়ার সুযোগ হারাতে পারে তারা।
এক সপ্তাহ আগে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেডের জন্য পিসিতে টিপিএম ২.০ (ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম মডিউল) হার্ডওয়্যার থাকাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছিল।
তাই যেসব পিসিতে টিপিএম ২.০ হার্ডওয়্যারটি নেই, সেগুলোতে উইন্ডোজ ১১ আপডেটের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল মাইক্রোসফট।
কিন্তু এর পরপরই কোম্পানিটি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এবং জানায় যে এখন পুরোনো এবং অনুপযুক্ত পিসিতেও উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করা যাবে।
পিসি ওয়ার্ল্ড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, 'মাইক্রোসফট এখন পুরোনো, অনুপযুক্ত পিসিতেও উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করার অনুমতি দিচ্ছে। বহু বছর সতর্ক করার পরে মাত্র এক সপ্তাহরও কম সময় আগে মাইক্রোসফট তাদের নীতি কড়াকাড়ি করেছিল। কিন্তু এখন অপ্রত্যাশিত ও বিভ্রান্তিকরভাবে কোম্পানিটি অনুপযুক্ত পিসিতেও উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করার সুযোগ দিয়েছে।'
মাইক্রোসফট তার নীতি বদলানোর কারণ হতে পারে এই সিদ্ধান্তটি ৪০ কোটি ব্যবহারকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ যাদের পিসিতে টিপিএম ২.০ নেই, তারা চাইলেও উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করতে পারতো না।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে 'ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পরিমাণ কম্পিউটার পরিত্যক্ত হওয়ার ঢেউ' রোধ করেছে মাইক্রোসফট। কারণ গ্রাহক ও পরিবেশের ওপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়ত।
তবে মাইক্রোসফট স্পষ্ট করে বলেছে, টিপিএম ২.০ ছাড়া যেসব পিসি রয়েছে, সেগুলো আপডেট করলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা আপডেট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মাইক্রোসফট তাদের সহায়ক পৃষ্ঠায় একটি নোট প্রকাশ করেছে। এতে তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, পিসি যদি পুরোনো বা অনুপযুক্ত হয়, তবে উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করা হলে ডিভাইসটি সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে এবং আপনি ভাইরাস বা সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য দেওয়া আপডেট নাও পেতে পারেন। এতে করে পিসি হ্যাকিং বা ভাইরাসের আক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
এছাড়া মাইক্রোসফট তাদের সহায়ক পৃষ্ঠায় একটি শর্তও দিয়েছে: 'যদি আপনি উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে অনুপযুক্ত পিসিতে এটি ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে কোনো আপডেট পাবেন না। এছাড়া, এর ফলে আপনার পিসি কাজ করা বন্ধ করে দিলে, মাইক্রোসফট আপনার পিসির কোনো ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধ থাকবে না। এমনকি যদি পিসির কোনো সমস্যা হয়, তবে নির্মাতাদের দেওয়া ওয়্যারেন্টি থাকলেও, তারা এর জন্য কোনো দায়বদ্ধ থাকবে না।'
যেহেতু উইন্ডোজ ১০-এর সাপোর্ট ২০২৫ সালে শেষ হয়ে যাবে, তাই অনেক ব্যবহারকারী এখন উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করার চেষ্টা করছেন। তবে মাইক্রোসফটের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং জটিলতার কারণে, অনেক ব্যবহারকারী বুঝতে পারছেন না তারা কি করবেন। এটি তাদের জন্য একটি বড় ঝুঁকি, কারণ এতে ব্যবহারকারীরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
তাই উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীদের জন্য মাইক্রোসফটের স্পষ্ট এবং সহজ নির্দেশিকা প্রয়োজন, যাতে ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন কিভাবে তাদের পিসি আপগ্রেড করতে হবে এবং কোন অপশনটি তাদের জন্য সেরা হবে। এখনই মাইক্রোসফটের নীতি যদি পরিবর্তন না হয়, তবে আগামী অক্টোবরের মধ্যে অনেক ব্যবহারকারী বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়বেন।
অনেকে আশা করছেন ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার আগেই মাইক্রোসফট তার নীতিতে সত্যিকারের পরিবর্তন আনবে।
তারা আশা করছে, উইন্ডোজ ১০-এর সাপোর্টের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরও, মাইক্রোসফট এসব ব্যবহারকারীদের জন্য সিকিউরিটি আপডেট দেবে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি