তৃতীয় দফায়ও পেছালো সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার চার্জ গঠন

আসামি পক্ষের আবেদনে সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার চার্জ গঠনের তারিখ তৃতীয় দফাতেও পেছালো। আগামী ১ সেপ্টেম্বর চতুর্থবারের মত চার্জ গঠনের দিন ধার্য করেছেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার। এসময় মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র হালিমুল হক মিরুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু জানান, সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলাটি রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর প্রথম চার্জ গঠনের দিন ছিল গত ৮ আগস্ট। এরপর দ্বিতীয় দিন ছিল ১৮ আগস্ট। তৃতীয় দিন ছিলো ২৫ আগস্ট।
কিন্তু আসামি পক্ষ নানা অজুহাতে বারবার চার্জ গঠনের জন্য তারিখ পেছানোর আবেদন করেন। গতবার (১৮ আগস্ট) তারা মামলার ৯ নম্বর আসামি কালু চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫১ ধারায় আটক হয়েছে বলে চার্জ গঠনের তারিখ পেছানোর দাবি করেন।
এবার তারা মামলার ১৪ নম্বর আসামি সাহেব আলী ৩৪ ধারায় পাবনার শাহজাদপুর থানায় গ্রেফতার হয়েছে বলে চার্জ গঠনের তারিখ পেছানোর আবেদন করেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক শাহজাদপুর পৌরসভার কারাবন্দি মেয়র (বরখাস্ত) হালিমুল হক মিরুর জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক আসামি কালুকে আগামী ২৫ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা অন্য ৩৬ আসামির জামিন বহাল রাখেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ১৫১ ধারা কিংবা ৩৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানোর মত কোন ধারা নয়। ৩৪ ধারা মাতলামোর ধারা। সামান্য কিছু জরিমানা দিয়েই এ ধারা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।
কিন্তু আসামিপক্ষ কৌশলে মামলাটির চার্জ গঠন পেছানোর জন্য বারবার এসব ঘটনা কৃত্রিমভাবে সংগঠিত করে কোন না কোন আসামিকে আদালতে অনুপস্থিত দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, মামলার চার্জ গঠন হলে খুব দ্রুত বিচার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ১৩৫ কার্য দিবসে মামলা শেষ করতে হবে। কিন্তু আসামিপক্ষ টাকার বিনিময়ে এসব সাধারণ ধারায় পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে সব আসামিকে হাজির করছে না। তাদের আইনজীবী আবেদনে আগামী ১ সেপ্টেম্বর চার্জগঠনের জন্য চতুর্থবারের দিন ধার্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পৌর মেয়র মিরুর শটগানের গুলিতে সাংবাদিক শিমুল গুরুতর আহত হন। পরদিন তিনি মারা যান। শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন বাদী হয়ে মিরুকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ একই বছরের ২ মে হালিমুল হক মিরু, তার ভাই মিন্টুসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মিরু কারাগারে থাকলেও অপর ৩৭ জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তরের জন্য গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু অজানা কারণে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত ১৪ জুলাই প্রজ্ঞাপনটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৌঁছে। এরপর বহুল আলোচিত মামলাটি রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে।