স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ কাজে আসছে না: বাণিজ্য সচিব

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, বাজার সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ কাজে আসছে না। তবে আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ করে দেওয়াটা কাজ করছে।
রবিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) আয়োজনে 'সিন্ডিকেটের প্রভাব ও নিত্যপণ্যের দামে প্রতিযোগিতা'- শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব বলেন, 'দাম নির্ধারণের চেয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকর করা বেশি জরুরি।'
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলে প্রতিযোগিতা কমিশনের কোনো দরকারই থাকে না। বরং দাম নির্ধারণ না করে দিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকরী করে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। প্রয়োজনে নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ''আমি বিশ্বাস করি, আমদানি পণ্যের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে বাজারের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। এভাবে তেলের দাম স্থিতিশীল করার সফলতা আমরা দেখেছি।'
তিনি বলেন, সংকট সৃষ্টির জন্য কিছু সরবরাহকারী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে অথবা সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এই কাজটা এখনও করছে এবং আগামীতেও করবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, 'দু-একদিনের মধ্যেই ৫০ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে ভারত থেকে ১৬৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে ঢুকবে। যা টিসিবির মাধ্যমে যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করা হবে।'
অন্যদিকে সভায় বাণিজ্য সচিব বলেন, 'ভারত অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও তা দেশের বাজারে সংকট তৈরি করবে না। কারণ আগামী মার্চের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই মৌসুমের মূল পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে।'
সভায় আলোচকরা বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাজার ঠিক করতে হলে বাজারে পণ্যের জোগান ও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। তাহলে সিন্ডিকেটের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনার দরকার পড়বে না। চাহিদার সঙ্গে জোগান ঠিক থাকলে বাজারে সিন্ডিকেটের কোনো প্রভাব থাকে না।
হুমায়ূন রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'ভোক্তা ও উৎপাদক দুই পক্ষের স্বার্থ দেখতে হবে। কোনো এক পক্ষের স্বার্থ দেখলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'বাজার স্থিতিশীলতা ছাড়া এখন যদি কোনো পণ্যের দাম কিছুটা কমেও আসে। তাহলে ভাবতে হবে ভবিষ্যতে সেটা আরও বাড়তি দামে কিনতে হতে পারে। তবে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাজার পরিচালিত হলে বাজার ঠিক হবে।'
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'আমাদের বাজারে অদৃশ্য অনেক বিষয় আছে। এখানে একাডেমিয়ার আলোচনা ঠিক কাজ করে না।'
তিনি বলেন, 'গত রমজানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ৩০০ টাকায় পৌঁছেছিল। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে মিটিং করার পর একদিনের মধ্যে দাম ১০০ টাকা দাম কমে গেল। এটাকে কি বলব তাহলে? এখানে ১০০ টাকা অতিরিক্ত লাভ করছিল কর্পোরেটগুলো।'
তিনি আরও বলেন, 'বাজারের ঠিক কি পরিমাণে কোন পণ্যের চাহিদা আছে তার কোনো তথ্য আমাদের নেই। যেমন আলুর উৎপাদনের তথ্য নিয়ে গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয় বলল ১.১২ কোটি টন, বিবিএস বলল ১.০৪ কোটি টন। যেখানে চাহিদা ৮০ লাখ টন। তাহলে কেন আলুর সমস্যা হলো?'
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট থাকতে পারে। দেশে দেশে এমন সিন্ডিকেট আছেও। আমাদের দেশেও আছে।
তিনি বলেন, 'কিন্তু এই সিন্ডিকেট যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সিন্ডিকেট যেন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সরকার যেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারে।'