Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

আগের মিস্ত্রিরা নেই, বাজারও অস্থির — কেমন আছে পাড়ার বেকারিগুলো

সত্তরের দশকে সব পাড়াতে ছিল না, তবে নব্বই দশকে বেকারিবিহীন পাড়া বোধহয় ঢাকায় ছিল না। তখন আইটেম ছিল অল্প — পাউরুটি, বিস্কুট, প্যাটিস, ক্রিম রোল, প্লেইন কেক ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলো যারা খেয়েছেন তারা এখনো মনে রেখেছেন। দেশে বেকারিপণ্যের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। স্থানীয় চাহিদার পুরোটাই মেটানো সম্ভব হচ্ছে স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে, কিছু রপ্তানিও হচ্ছে। তবে অটোমেটেড বেকারির সংখ্যা শতাধিক। মোট বাজারের ষাট ভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ পর্যায়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে, ঐতিহ্যবাহী বেকারিগুলো টিকে থাকতে পারবে কি না।
আগের মিস্ত্রিরা নেই, বাজারও অস্থির — কেমন আছে পাড়ার বেকারিগুলো

ফিচার

সালেহ শফিক
28 November, 2023, 01:00 pm
Last modified: 28 November, 2023, 01:02 pm

Related News

  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ
  • ছিনতাইকারী সন্দেহে রাজধানীর দারুসসালামে ২ যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 

আগের মিস্ত্রিরা নেই, বাজারও অস্থির — কেমন আছে পাড়ার বেকারিগুলো

সত্তরের দশকে সব পাড়াতে ছিল না, তবে নব্বই দশকে বেকারিবিহীন পাড়া বোধহয় ঢাকায় ছিল না। তখন আইটেম ছিল অল্প — পাউরুটি, বিস্কুট, প্যাটিস, ক্রিম রোল, প্লেইন কেক ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলো যারা খেয়েছেন তারা এখনো মনে রেখেছেন। দেশে বেকারিপণ্যের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। স্থানীয় চাহিদার পুরোটাই মেটানো সম্ভব হচ্ছে স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে, কিছু রপ্তানিও হচ্ছে। তবে অটোমেটেড বেকারির সংখ্যা শতাধিক। মোট বাজারের ষাট ভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ পর্যায়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে, ঐতিহ্যবাহী বেকারিগুলো টিকে থাকতে পারবে কি না।
সালেহ শফিক
28 November, 2023, 01:00 pm
Last modified: 28 November, 2023, 01:02 pm

অলি মহাজন এখন আর বেঁচে নেই, তবে তার বেকারিটি আছে, কিছুটা শ্রীবৃদ্ধিও হয়েছে। অলি মহাজন পাউরুটি, কেক, বিস্কুট বানাতে জানতেন, নিজের কারখানার তিনিই ছিলেন হেডমিস্ত্রি। এখন তার বড় ছেলে হাল ধরে আছেন পুষ্প বেকারি ও কনফেকশনারির। ২০ জন চুক্তিভিত্তিক হকার বেকারির পণ্য পৌঁছায় দোকানে দোকানে। অলি মহাজন কারখানা খুলেছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের কাছে, চল্লিশ বছর আগে। প্রথম দিকে ৬-৭টি আইটেম ছিল, এখন ৩৫টির বেশি আইটেম প্রস্তুত করে পুষ্প বেকারি যার মধ্যে বিস্কুটই আছে ২০ রকমের। সল্টেড, টোস্ট, ঘিয়ে ভাজার সঙ্গে গোল বিস্কুট, তক্তি বিস্কুট, বড় হাওয়াই বিস্কুট, চৌকোনো বিস্কুটও আছে। পাউন্ড কেকের সঙ্গে পাবেন টপ কেক।

পাঁচটি শোরুম থাকলেও বেশি বিক্রি হকারদের মাধ্যমেই। ১০ নম্বর ফকিরবাড়ির শোরুমের কর্মী শাহ আলম। পনের বছর হলো তার চাকরির বয়স। 'চিকন ড্রাই কেক' পুষ্প বেকারির হট আইটেম বলে জানালেন শাহ আলম। আগের তুলনায় বিক্রি তাদের বেড়েছে, তবে লাভ কমেছে, কারণ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে । শাহ আলম বলছিলেন, 'এখন  যে পাউরুটি বিক্রি করি ৭০ টাকা, ২০ টাকায় বিক্রি করেছি ১০ বছর আগেও।' তাহলে কি আপনারা কম্প্রোমাইজ করছেন? প্রশ্নের উত্তরে শাহ আলম বললেন, 'অস্বীকার করার উপায় নেই, কম্প্রোমাইজ করতেই হচ্ছে, নইলে লাভ দূরে থাক কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারব না।'

প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারির একাংশ। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

গ্যাসের চুলা পছন্দ করেননি অলি মহাজন

শাহ আলমের কাছে জানতে চাইলাম, হকারদের সঙ্গে আপনাদের চুক্তির ধরন কী? 'আমরা তাদেরকে প্রতিটি পণ্যের একটি নির্দিষ্ট দাম ধরে দিই, ওই দামের চেয়ে বেশি যত তারা বিক্রি করতে পারে সেটা তাদের। আগের দিন এসে তারা চাহিদা বলে যায়, কেউ তিন হাজার টাকার মাল নেয়, কেউ পাঁচ হাজার টাকার। তারা চায়ের দোকান, পাড়ার মুদি দোকানগুলোয় পণ্য সরবরাহ করে,' বলেন শাহ আলম।

ঢাকায় এখন আর লাকড়ির চুলায় পণ্য তৈরি সম্ভব নয় বলে জানান শাহ আলম। বেশিরভাগ কারখানাই লোকালয়ে। লাকড়ির চুলায় ধোঁয়া হয় প্রচুর। 'এখন গ্যাস আছে, ওভেন আছে, ডো মেকিং মেশিন আছে, প্যাকেজিং মেশিনও আছে। প্রোডাকশনও বেড়েছে। আগের পদ্ধতিতে কাজ করলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। আমাদের মুরুব্বি (অলি মহাজন) শেষদিকে এগুলো দেখেছেন, তবে তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন না। বলতেন, এতে ভালো হবে না রুটি, বিস্কুট। আমরাও বুঝি পণ্যের মান আগের মতো নেই কিন্তু উপায়ও নেই।'

ফ্রুট ব্রেড। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

'কিছু কর্পোরেট হাউজ নতুন করে এ ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে, এতে কি আপনাদের ওপর চাপ বাড়ছে না?' শাহ আলম বলেন, 'হ্যাঁ, কিছু চাপ তো বাড়ছেই। এখন পাঁচ টাকার বিস্কুট প্যাকেট, কেক প্যাকেট দোকানে ঝুলতে দেখবেন। বছরকয় আগেও ছিল না। তবে আমাদের বড় ঝামেলা বাজারের অস্থিরতা। দীর্ঘদিনের ব্যবসা — এলাকার লোক আমাদের চেনে — আমরা চাইলেই জিনিসের দাম রাতারাতি বাড়াতে পারি না, মানও খারাপ করতে পারি না। আমাদের বিপদ বহুমুখী। আর আগের মতো ভালো মিস্ত্রি এখন আর পাবেন না। বেকারিতে যারা কাজ করে সবাই কিছু না কিছু জানে। তবে হাতযশ আছে এমন মিস্ত্রি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।'

একটি স্বল্পায়ু বেকারির গল্প

সত্তরের দশকে সব পাড়াতে ছিল না, তবে নব্বই দশকে বেকারিবিহীন পাড়া বোধহয় ঢাকায় ছিল না। তখন আইটেম ছিল অল্প — পাউরুটি, বিস্কুট, প্যাটিস, ক্রিম রোল, প্লেইন কেক ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলো যারা খেয়েছেন তারা এখনো মনে রেখেছেন।

ক্রস বান। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

দেশ তখন সদ্য স্বাধীন। ইলিয়াসউদ্দিন আহমেদ পরিবার নিয়ে থাকেন ইন্দিরা রোডে। তার বন্ধুদের একজন অবসরপ্রাপ্ত এক জেলর। বসে না থেকে কিছু একটা করতে চাইছিলেন। তখন ইন্দিরা রোডের ভবনগুলো ছিল একতলা বা দোতলা; তবে বাড়ি ছিল খোলামেলা। বেশ জায়গাজুড়ে একেকটি বাড়ি। জেলর সাহেবের বাড়িটিও বড়। ইলিয়াসউদ্দিনকে তিনি মনের কথা খুলে বললেন আর পরামর্শ চাইলেন, কী করা যায়। ইলিয়াসউদ্দিন সাত-পাঁচ ভেবে বললেন, একটি বেকারি চালু করতে পারেন। জেলর সাহেবের কথাটি মনে ধরল।

জেলর সাহেব হিসাব কষে দেখলেন, পাড়ায় ঘর-বাড়ি বেশি না থাকলেও খরচ উঠে আসতে পারে, মায় দু-চার পয়সার মুখও দেখা যাবে। বিশেষ করে হাই সাহেবের মতো ভদ্রলোক আছেন, হাজী আব্দুল জলিল সাহেবের মতো ধনী ব্যক্তি আছেন, সম্ভ্রান্ত খান বাহাদুর আঃ মজিদ সাহেবের পরিবারের সদস্যরা আছেন। তার ওপর ইলিয়াসউদ্দিনের মতো  রুচিশীল ও আধুনিক মননের বন্ধু আছেন। জেলর সাহেব প্রথমে নিজের বাড়ির খোলা জায়গাতে একটা চালাঘর তুললেন। মিস্ত্রি (কারিগর) জোগাড় করলেন। বস্তা ভরতি আটা, ময়দা, চিনি আসতে থাকল।

বাটার বান। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

ইলিয়াসউদ্দিন আহমেদের ছেলে সেলিম আহমেদ তখন স্কুল ছাত্র, আমরা তাকে এখন জানি একজন মননশীল সাংবাদিক হিসাবে। তিনি স্মৃতির পাতা উল্টে চলে গেলেন বাহাত্তর সালের দিনগুলোয়, 'অল্প দিনেই আমাদের বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠল জেলর সাহেবের বেকারিটি। অবাক হয়ে দেখতাম কীভাবে ময়দা, চিনি, তেল, ডিম, দুধ মিলেমিশে পাউরুটি বা বিস্কুট হয়ে যাচ্ছে। মনে হতো ম্যাজিক। স্কুল থেকে ফিরে সে গ্র্যান্ড প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করতাম।'

মাটি থেকে চার-পাঁচ ফুট উুঁচ ঝামা পাথরের (তাপ ধরে রাখার জন্য) বেদি আর ছাদও ঝামা পাথরের, ওপরের পুরোটা মাটি দিয়ে মোড়ানো ঢিবির মতো। সামনের নিচের দিকে একটি ফোকর ছিল, যার ভেতর দিয়ে লাকড়ি গুঁজে দেওয়া হতো। বেদি বরাবর ছিল বড় খোলা জায়গা, সেখান দিয়ে টিনের ট্রেতে করে আঁচানোর জন্য বিস্কুট বা পাউরুটি ঢোকানো হতো। আঁচানো শেষ হলে সেই ফোকর দিয়েই সদ্য তৈরি হওয়া কেক, পাউরুটি, বিস্কুট বের করে আনা হতো।

প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

'জেলর সাহেব দোকানের নাম রেখেছিলেন নওরোজ। প্রথম যেদিন বেকারিতে বিস্কুট, রুটি তৈরি হলো; বাড়ি বাড়ি কিছু কিছু উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন তিনি,' এখনো স্মৃতি টাটকা সেলিম আহমেদের মনে।

বেকারি পুরোদমে চালু হওয়ার পর জেলর সাহেব মার্কেটিংয়ের কথা ভাবলেন। 'হাই সাহেবের বাড়ির খোলা জায়গায় একটি শোরুম দিলেন। কয়েক স্তরের কাঠের তাকে থরে থরে সাজানো থাকত লোভনীয় সব খাবার। কাচের বয়ামেও থাকত। আমরা কখনো কারখানা থেকে, কখনোবা শো রুম থেকে কিনে আনতাম। রুটি বা কেক বিক্রি হতো পাউন্ড দরে। যতদূর মনে পড়ে, এক পাউন্ড কেকের দাম পড়ত দুই থেকে আড়াই টাকা।'

প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারিতে ক্রেতারা। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

তখন ব্রাউন পেপারের প্যাকেট হতো বলে জানান সেলিম আহমেদ। এগুলোকে ব্যাম্বু পেপার বলা হতো, গাত্রাবরণ মসৃণ, তাই তেল আটকাত না। আর কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি খড়খড়ে এক ধরনের বাক্সও চালু ছিল।

সেলিম আহমেদ আরও জানালেন, তখন অতিথি এলে কেক-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করা একটা অভিজাত ব্যাপার ছিল। অতিথিরাও উপহার হিসেবে বেকারি আইটেম নিয়ে আসতেন। জ্বর হলে দুধ-পাউরুটি ছিল আবশ্যকীয় ব্যাপার। বেকারি পণ্যের মধ্যে হট প্যাটিস ছিল 'রিয়েলি হট আইটেম'।

কাপ চিজ কেক। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

তবে জেলর সাহেব বেশিদিন চালাতে পারেননি তার সাধের বেকারি। বড়জোর ৩–৪ বছর আয়ু পেয়েছিল নওরোজ। কারণ ময়দা, চিনি, তেল ছিল দুষ্প্রাপ্য। বেশি পরিমাণে কিনতে স্পেশাল পারমিট লাগত। ব্ল্যাক মার্কেটে যা পাওয়া যেত, তার দাম পড়ত অনেক বেশি। তাই এক পর্যায়ে পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যায় নওরোজ।

বিক্রি বেড়েছে কিন্তু ব্যবসা নেই

বাদল বেকারিও যাত্রা শুরু করেছিল আশির দশকের গোড়ায়। প্রতিষ্ঠাতা হাজী আব্দুল মতিন এখন অশীতিপর। তবে অবসর পেলে দোকানে এসে বসেন। যখন শুরু হয় তখন মিরপুর ১০ নম্বরে লোক বলতে ছিল না। জিনজিরা থেকে পণ্য কিনতে আসত পাইকাররা। মাথায় রাখা টুকরিতে কেক, পাউরুটি, বিস্কুট সাজিয়ে হেঁটে হেঁটে চেঁচিয়ে বলত: 'কেক নিবেন, পাউরুটি নিবেন, বিস্কুট নিবেন?' এখন বিক্রি বেড়েছে কিন্তু ব্যবসার তাল কেটে গেছে বলে জানালেন আব্দুল মতিন। দোকান ভাড়া বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে দফায় দফায়, গ্যাসের চুলায় ভালো মানের পণ্য তৈরি সম্ভব হচ্ছে না — মতিন সাহেব হতাশ।

সদ্য প্রস্তুত হওয়া ডেনিশ। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

সেলিম রেজা হানিলোফকে ভোলেননি

ওই আশির দশকের শুরুতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ইস্কাটন রোডের হানিলোফ বেকারি। সেলিম রেজা পঁচাশি-ছিয়াশি সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। কোনো কারণে বাংলামোটর বা মগবাজারে এলে হানিলোফে কিছু না কিছু খেতেন। ওই দিন যেমন গাড়ি সারাতে এসেছিলেন মগবাজারে, হেঁটে বাকিটা পথ এসে পুরোনো দিনের স্বাদ নিতে চেয়ে বসেছেন প্রিয় বেকারিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পরে সেলিম রেজা কাজ নিয়েছিলেন দিলু রোডের এক কনসাল্টিং হাউজে। তখন সহকর্মীরা মিলে মাঝেমধ্যেই আসতেন এখানে। বলছিলেন, 'তখন তো বেশি বেকারি ছিলও না, তার ওপর এদের খাবারের মান ছিল ভালো। আমাদের অফিসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এখান থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া হতো। আমার স্ত্রীকে নিয়েও একবার এসেছিলাম।'

দুটি আদি বেকারি

তৈরি হচ্ছে পাউরুটি। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

ঢাকায় এখনও উৎপাদনে আছে এমন দুটি আদি বেকারির নাম লক্ষ্মীবাজারের প্রিন্স অব ওয়েলস এবং আবুল হাসনাত রোডের আনন্দ বেকারি। বলা হয়ে থাকে, প্রিন্স অব ওয়েলসের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের দ্বীপাঞ্চল ওয়েলস থেকে আগত একজন (মতান্তরে ওয়েলস নামক এক ব্রিটিশ)। পরে তার কারিগর বুদ্ধু মিস্ত্রি এটি কিনে নিয়ে পরিচালনা করতে থাকেন। বুদ্ধু মিস্ত্রির উত্তরাধিকারেরাই এটি পরিচালনা করছে এখনো। ঢাকার প্রথম বিবাহের কেক ও ক্রিসমাস কেক তৈরির কৃতিত্ব এদেরকে দেওয়া হয়। জ্যাম কেক, চিজ কেক এবং লাভ লেটারস তাদের উল্লেখযোগ্য পণ্য।

আনন্দ বেকারির বয়সও বলা হচ্ছে ১০০ বছরের বেশি। ১৯১১ সালে ফরাশগঞ্জে লালকুঠির কাছে এক ইংরেজ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পর ইংরেজ মালিক চলে গেলে বেকারিটি কিনে নেন চান মিয়া। তিনি ভালো কারিগর ছিলেন। রাতভর রুটি-বিস্কুট তৈরি করতেন, আর দিনে ফেরি করে বিক্রি করতেন। কখনো বুড়িগঙ্গা পার হয়ে চলে যেতেন জিনজিরা, কোনোদিন তুরাগ পার হয়ে টঙ্গী। এক পর্যায়ে চান মিয়ার রুটি-বিস্কুটের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আনন্দ কনফেকশনারি নাম দিয়ে স্থায়ীভাবে দোকান খোলেন পঞ্চাশের দশকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চান মিয়ার উত্তরাধিকারীরা চকবাজার, মহাখালি, ওয়ারিতে শাখা খোলেন।

ডেনিশ। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

ঢাকার আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী বেকারি হলো কুসুম বেকারি, ইউসুফ বেকারি, হক বেকারি, প্রিন্স বেকারি ইত্যাদি।

বেকারি বাজারের হালচাল

দেশে বেকারি পণ্যের বাজার আট হাজার কোটি টাকার। স্থানীয় চাহিদার পুরোটাই মেটানো সম্ভব হচ্ছে স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে, কিছু রপ্তানিও হচ্ছে। অলিম্পিক, প্রাণ, পারটেক্স, হক, নাবিস্কো, বঙ্গজ, আকিজ, ইস্পাহানি, কোকোলা প্রভৃতি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারিত করছে। অটোমেটেড বেকারির সংখ্যা শতাধিক। মোট বাজারের ষাট ভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ পর্যায়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে, ঐতিহ্যবাহী বেকারিগুলো টিকে থাকতে পারবে কি না।

বিস্কুট। ছবি: রাজীব ধর। সৌজন্যে: প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি

বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে ঐতিহ্যবাহী বেকারির সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৭০০টি। ২০১৯ সালে সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজারে। অথচ চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০০৮ সালে জনপ্রতি চাহিদা ছিল আধা কেজির কম, এখন তা দুই কেজির বেশি। অটোমেটেড কারখানার সংখ্যা বছর ঘুরতেই বাড়ছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ঐতিহ্যবাহী বেকারিগুলোর ওপর। পূরবী সিনেমা হলের পেছনে অবস্থিত উর্মি বেকারির ব্যবস্থাপক যেমন বলছিলেন, 'বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। বাজার মনে হয় অদৃশ্য শক্তির হাতে, তারা ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু আমরা তো ইচ্ছেমতো রুটি-বিস্কুটের দাম বাড়াতে পারি না। অনেক কাস্টমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বছরের পর বছর ধরে, দাম বাড়ানোর আগে আমাদের ১০ বার ভাবতে হয়।'

Related Topics

টপ নিউজ

বেকারি / পুরোনো বেকারি / বিস্কুট ও ব্রেড শিল্প / বিস্কুট / পাউরুটি / ঢাকা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর
  • মেইতেই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল মণিপুর, ইন্টারনেট বন্ধ-কারফিউ জারি
  • করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ
  • মোদির পক্ষে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিযোগে মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি
  • বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল
  • কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ায়

Related News

  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ
  • ছিনতাইকারী সন্দেহে রাজধানীর দারুসসালামে ২ যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর

2
আন্তর্জাতিক

মেইতেই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল মণিপুর, ইন্টারনেট বন্ধ-কারফিউ জারি

3
বাংলাদেশ

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ

4
আন্তর্জাতিক

মোদির পক্ষে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিযোগে মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি

5
বাংলাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

6
বাংলাদেশ

কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ায়

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab