এক্স-এ ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ প্রচারণা চালান; কিন্তু তাদের অনেকেই রুশ কিংবা ভারতীয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' (এমএজিএ) আন্দোলনের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আসলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান করছেন। এক্স-এর নতুন স্বচ্ছতা টুলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা গেছে, এসব ইনফ্লুয়েন্সারের অনেকেই রাশিয়া, নাইজেরিয়া এবং ভারতে অবস্থান করছেন।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মে গত শুক্রবার 'অ্যাবাউট দিস অ্যাকাউন্ট' নামে একটি নতুন ফিচার চালু হয়েছে। এই টুলের মাধ্যমে এখন যে কেউ দেখতে পারবেন, নির্দিষ্ট কোনো অ্যাকাউন্ট আসলে কোন স্থান থেকে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি অ্যাকাউন্টটি কবে খোলা হয়েছে, কতবার ব্যবহারকারীর নাম [ইউজার নেম] পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অ্যাপটি কীভাবে ডাউনলোড করা হয়েছে—এসব তথ্যও এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।
ফিচারটি চালুর পর ব্যবহারকারীরা লক্ষ্য করেন, নিজেদের 'দেশপ্রেমিক আমেরিকান' দাবি করা বহু 'এমএজিএ' ও ডানপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার মূলত বিদেশ থেকেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এই ঘটনাকে ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘদিনের দাবির সত্যতা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। উদারপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার হ্যারি সিসন মন্তব্য করেছেন, 'এটি নিঃসন্দেহে এই প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সেরা দিন।'
তিনি আরও বলেন, 'এমএজিএ অ্যাকাউন্টগুলো যে বিদেশি শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে—তা আজ হাতেনাতে ধরা পড়ল। আমি এবং আমার মতো অনেক ডেমোক্র্যাট দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে সতর্ক করে আসছিলাম, আজ আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো।'
সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, 'এমএজিএনেশন এক্স' নামের একটি অ্যাকাউন্টের প্রায় ৪ লাখ অনুসারী রয়েছে। অ্যাকাউন্টটির পরিচিতি বা বায়োতে লেখা আছে— 'প্যাট্রিয়ট ভয়েস ফর উই দ্য পিপল' ['উই দ্য পিপল'-এর দেশপ্রেমিক কণ্ঠস্বর]। অথচ এটি বাস্তবে পরিচালিত হচ্ছে পূর্ব ইউরোপ থেকে।
একইভাবে 'ইভাঙ্কা নিউজ' নামের আরেকটি জনপ্রিয় প্রোফাইল নাইজেরিয়া থেকে চালানোর তথ্যও সামনে এসেছে। ইভাঙ্কা ট্রাম্পের ভক্তদের এই অ্যাকাউন্টটির ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এখান থেকে নিয়মিত অবৈধ অভিবাসন, ইসলাম এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নানা ধরনের পোস্ট করা হতো।
আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যবহারকারীরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বের করেছেন। যেমন, 'ডার্ক এমএজিএ' নামের প্রায় ১৫ হাজার ফলোয়ারের একটি অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে থাইল্যান্ড থেকে। ৫১ হাজারের বেশি ফলোয়ার থাকা 'এমএজিএ স্কোপ' পরিচালনা করা হচ্ছে নাইজেরিয়া থেকে। অন্যদিকে, 'এমএজিএ বিকন' নামের অ্যাকাউন্টটির ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়ায়।
এই সত্য উন্মোচনে যোগ দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট-এর ব্যবহারকারীরাও। তারা এমন বহু অ্যাকাউন্টের উদাহরণ শেয়ার করছেন, যারা নিজেদের প্রকৃত উৎস গোপন রেখেছে। এক রেডিট ব্যবহারকারী উদাহরণ হিসেবে এমন এক নারীর অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন, যিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা দাবি করলেও তার অবস্থান দেখাচ্ছিল রাশিয়ায়। অবশ্য রোববার নাগাদ ওই অ্যাকাউন্টের অবস্থান আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে। মন্তব্যের ঘরেও অনেকে এমন আরও উদাহরণ তুলে ধরছেন।
টুইটারে বট বা স্বয়ংক্রিয় অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভুল তথ্য ও অপপ্রচার ছড়ানোর সমস্যা দীর্ঘদিনের। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে ইলন মাস্ক মালিকানা নেওয়ার পর এবং নাম পরিবর্তন করে 'এক্স' রাখার পর থেকে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এছাড়া এক্স-এর নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট 'গ্রোক'-এর বিরুদ্ধেও প্রায়ই মিথ্যা দাবি করা ও তা প্রচারের অভিযোগ উঠেছে।
