এটি ভুল করতে পারে: এআইকে ‘অন্ধভাবে বিশ্বাস’ না করার পরামর্শ সুন্দর পিচাইয়ের
মানুষের উচিত হবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুলগুলো যা বলে, তার সবকিছু 'অন্ধভাবে বিশ্বাস' করা। এমনটাই জানিয়েছেন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই। বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ পরামর্শ দেন।
সুন্দর পিচাই বলেন, এআই মডেলগুলো 'ভুল করতে পারে'। তাই তিনি ব্যবহারকারীদের শুধুমাত্র এআই-এর ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য টুলের পাশাপাশি এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'শুধুমাত্র এআই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে একটি সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডারের ইকোসিস্টেম বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।' পিচাইয়ের ভাষ্যমতে, 'এ কারণেই মানুষ গুগল সার্চ ব্যবহার করে এবং আমাদের অন্যান্য পণ্যগুলো সঠিক তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য।'
তবে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারকারীদের দিয়ে নিজেদের টুলস যাচাই করানোর আহ্বান জানানো উচিত নয়; বরং তাদের সিস্টেমগুলোকেই আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সৃজনশীল লেখালেখির ক্ষেত্রে এআই সহায়ক হলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে পিচাই বলেন, 'মানুষকে শিখতে হবে, কোন কাজে এআই টুলস ভালো, আর এগুলো যা বলে তা অন্ধভাবে বিশ্বাস করা চলবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য প্রচুর কাজ করি। কিন্তু সর্বাধুনিক এআই প্রযুক্তিও কিছু ভুলের ঝুঁকি রাখে।'
গুগল তাদের এআই টুলগুলোতে সতর্কবার্তা বা ডিসক্লেইমার প্রদর্শন করে, যাতে ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন যে এই টুল ভুল করতে পারে। তবে এই সতর্কবার্তা দিয়েও তারা নিজেদের পণ্যের ভুলভ্রান্তি নিয়ে সমালোচনা ও উদ্বেগ এড়াতে পারেনি।
বিশেষ করে, গুগলের সার্চ ফলাফলের সারসংক্ষেপ বা 'এআই ওভারভিউ' ফিচারটি চালুর পর এলোমেলো ও ভুল উত্তর দেওয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
চ্যাটবটের মতো জেনারেটিভ এআই পণ্যগুলোর বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রবণতা বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের একটি বড় কারণ।
'নতুন পর্যায়' ও জেমিনি ৩.০
গুগলের সর্বশেষ কনজ্যুমার এআই মডেল জেমিনি ৩.০–এর উন্মোচন নিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়া আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি এই মডেল উন্মোচন করে জানায়, এটি তাদের সার্চসহ বিভিন্ন পণ্যের কেন্দ্রে 'ইন্টেলিজেন্সের নতুন যুগ' সূচনা করবে।
এক ব্লগপোস্টে গুগল জানায়, জেমিনি ৩.০ ছবি, অডিও ও ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের ইনপুট বুঝতে ও সাড়া দিতে শিল্পে শীর্ষস্থানীয় সক্ষমতা রাখে; পাশাপাশি যুক্তিতর্ক বা রিজনিংয়েও 'সর্বাধুনিক' পারফরম্যান্স দিতে পারে।
চলতি বছরের মে মাসে গুগল সার্চে 'এআই মোড' চালু করা শুরু করে, যেখানে জেমিনি চ্যাটবটকে ব্যবহারকারীদের বিশেষজ্ঞের মতো পরামর্শ দিতে সংহত করা হয়। তখন পিচাই বলেন, 'জেমিনিকে সার্চে সংহত করা 'এআই প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের নতুন পর্যায়' নির্দেশ করে।'
চ্যাটজিপিটির মতো এআই সেবার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে গুগল, কারণ এসব সেবা তাদের সার্চ–বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে।
পিচাইয়ের মন্তব্য বিবিসির আগের গবেষণাকেও সমর্থন করে। গবেষণায় দেখা যায়, খবরের সংক্ষিপ্তসার তৈরিতে এআই চ্যাটবটগুলো ভুল তথ্য দেয়। বিবিসির কনটেন্ট দিয়ে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি, মাইক্রোসফটের কো-পাইলট, গুগলের জেমিনি ও পারপ্লেক্সিটি এআইকে প্রশ্ন করা হলে তাদের উত্তরে 'উল্লেখযোগ্য ভুল' পাওয়া যায়।
বিবিসির আরও বিস্তৃত অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উন্নতি সত্ত্বেও এখনো ৪৫% ক্ষেত্রে এআই অ্যাসিস্টেন্টরা খবর ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
