ইকুয়েডরের কারাগারে দুটি গোষ্ঠীর দাঙ্গায় নিহত ৩১; ২৭ জনকেই ঝুলিয়ে হত্যা
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি কারাগারে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গায় অন্তত ৩১ জন বন্দি নিহত হয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু শ্বাসরোধ করে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হয়েছে।
গেল রোববারের এই ঘটনাটি লাতিন আমেরিকার দেশটিতে চলমান কারা-সহিংসতার সর্বশেষতম নৃশংস উদাহরণ।
গেল রোববার ঘটনাটি ঘটেছে মাচালা শহরের এল ওরো কারাগারে। ইকুয়েডরের কারা প্রশাসন সংস্থা 'স্নাই' (SNAI) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রবিবার ভোরে কারাগারে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এতে প্রাথমিকভাবে চারজন বন্দি নিহত ও এক পুলিশ সদস্যসহ ৩৩ জন বন্দি আহত হন। এর কয়েক ঘণ্টা পর, কারাগারের তৃতীয় তলার একটি ব্লক থেকে আরও ২৭ জনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে নিরাপত্তাকর্মীরা।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দিদের একটি নতুন নির্মিত কারাগারে স্থানান্তরের পরিকল্পনার জেরে এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা কারাগারের ভেতর থেকে গুলি, বিস্ফোরণ এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার শুনতে পান বলে জানান। পরে পুলিশের এলিট ফোর্স কারাগারে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইকুয়েডরের কারাগারগুলো মাদক পাচারকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যা প্রায়শই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্ম দিচ্ছে। অতিরিক্ত বন্দি, দুর্নীতি এবং কর্তৃপক্ষের দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত কারাগারগুলোতে দাঙ্গায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এই একই কারাগারে গোষ্ঠীগত সহিংসতায় ১৩ জন বন্দি ও একজন কারারক্ষী নিহত হয়েছিলেন। কয়েক দিন পরই এসমেরালডাস শহরের আরেকটি কারাগারে দাঙ্গায় আরও ১৭ জন প্রাণ হারান।
বন্দিদের স্বজনেরা কারাগারের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোকে আলাদা রাখার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, মাচালা শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে শহরের কেন্দ্র থেকে এই কারাগারটি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ার সরকার সান্তা এলেনা প্রদেশে 'এল এনকুয়েন্ত্রো' নামে একটি নতুন কারাগার নির্মাণের ঘোষণা দেয়, যা চলতি মাসেই চালু হওয়ার কথা।
ইকুয়েডরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার পেছনে কারাগারভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে 'লস লোবোস' ও 'লস চোনেরোস'কে যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে 'বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
