বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল পাসপোর্ট কোনগুলো?

বিমানবন্দরের লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা বা সেই লাইনকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া—এই দুই অভিজ্ঞতাই আমাদের বলে দেয় যে, সব পাসপোর্টের কদর এক নয়। কিছু দেশের নাগরিকরা খুব সহজেই বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করতে পারেন, আবার কিছু দেশের নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয় এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স, একটি পরামর্শক সংস্থা যারা ধনীদের আকর্ষণীয় দেশের নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করে, তারা কোন দেশের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই কতগুলো দেশে প্রবেশ করতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করে একটি র্যাঙ্কিং তৈরি করে। তাদের সর্বশেষ মূল্যায়ন বলছে, আমেরিকার পাসপোর্ট ধীরে ধীরে তার ক্ষমতা হারাচ্ছে।
র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে কারা?
এ বছর র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে এশিয়ার দেশগুলোর দাপট চোখে পড়ার মতো। টানা চতুর্থ বছরের মতো শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর, যার পাসপোর্টধারীরা ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে ১৯৩টিতেই ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে। এরপরেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০) এবং জাপান (১৮৯)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশ যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে, যাদের ১৮৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে।
অন্যদিকে, তালিকার একেবারে তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইরাক। এই দেশগুলোর নাগরিকরা যথাক্রমে মাত্র ২৪, ২৬ এবং ২৯টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের পতন
আমেরিকা, যা ২০১৪ সালে এই তালিকার শীর্ষে ছিল, ২০০৬ সালে র্যাঙ্কিং শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সেরা দশের বাইরে চলে গেছে। দেশটি এখন মালয়েশিয়ার সাথে যৌথভাবে ১২তম স্থানে রয়েছে; উভয় দেশের নাগরিকরাই ১৮০টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে। ব্রিটেন, যা ২০১৫ সালে শীর্ষস্থানে ছিল, এখন অষ্টম স্থানে নেমে এসেছে।

এর মূল কারণ হলো 'ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া'। ধনী দেশগুলো যখন তাদের ভ্রমণ নীতি কঠোর করে, তখন অন্য দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একই কাজ করে। ফলে, তাদের নিজেদের নাগরিকদের ভ্রমণের স্বাধীনতাও কমে যায়।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং জাপান—এই ধনী দেশগুলোই সবচেয়ে কম সংখ্যক দেশের পাসপোর্টধারীদের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়। সম্ভবত একারণেই, গত দশকে এই পাঁচটি দেশের পাসপোর্টের ক্ষমতা হয় স্থিতিশীল রয়েছে, নয়তো কমেছে।
অন্যদিকে, চীনের পাসপোর্টের ক্ষমতা বেড়েছে রকেটের গতিতে। ২০১৫ সালে ৯৪তম স্থানে থাকা চীন এই বছর ৬৪তম স্থানে উঠে এসেছে। চীন এখন আমেরিকার চেয়ে ৩০টি বেশি দেশের নাগরিকদের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়, যদিও এর মধ্যে রাশিয়ার মতো কিছু দেশও রয়েছে, যাদের পশ্চিমা সরকারগুলো এড়িয়ে চলে।
'গোল্ডেন পাসপোর্ট'-এর হিড়িক
পাসপোর্টের ক্ষমতা কমলেও, আমেরিকানরা এখনও বেশ স্বাধীনভাবেই ভ্রমণ করতে পারে। তা সত্ত্বেও, তারা এখন অন্য দেশের পাসপোর্ট অর্জনের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কখনও কখনও তারা 'গোল্ডেন ভিসা' বা 'গোল্ডেন পাসপোর্ট' প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগের বিনিময়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব কিনছে।

হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানিয়েছে, আমেরিকানরাই এখন তাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ। তুরস্ক, ভারত, চীন এবং ব্রিটেনের সম্মিলিত গ্রাহকের চেয়েও আমেরিকানদের সংখ্যা বেশি। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আমেরিকানদের আবেদন ২০২৪ সালের মোট আবেদনের চেয়ে ৬৭% বেশি ছিল, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৬০% বেশি ছিল। আমেরিকানদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপীয় এবং ক্যারিবীয় পাসপোর্ট এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতিও তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
একটি বাড়তি পাসপোর্ট এখন সম্পদশালী এবং ভ্রমণবিলাসী মানুষদের জন্য এক ধরনের বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে।