যে লোকের পুরো নাম বলতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট!
"আপনার নাম কি?" – এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাদের লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু লরেন্স ওয়াটকিন্সের জন্য এই সহজ কাজটিই যেন এক মহাযজ্ঞ! কারণ তার পুরো নাম বলতে গেলে ঘড়ি ধরে পাক্কা ২০ মিনিট সময় লেগে যায়! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। তার নামে রয়েছে মোট ২২৫৩টি শব্দ।
এই ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ সালে তার বিয়েতে। অনুষ্ঠানের পুরোহিত বেচারা আগে থেকেই তার এই বিশাল নামটি রেকর্ড করে রেখেছিলেন পাত্রের নাম ঘোষণার জন্যে। অতিথিরা যখন শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে খোশগল্পে মত্ত, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল সেই রেকর্ডিং। অবশেষে, সেই দীর্ঘ রেকর্ডিং শেষ হলে ওয়াটকিন্স শুধু বলেন "আই ডু (আমি রাজি)"!
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের এই ৬০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী বিশ্বেaর দীর্ঘতম ব্যক্তিগত নামের জন্য বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী। সম্প্রতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তার এই অদ্ভুত খেতাবটিকে নতুন করে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্ব রেকর্ডের অদ্ভুত শখ
ছোটবেলা থেকেই লরেন্স ওয়াটকিন্স ছিলেন "রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট!" অনুষ্ঠানের পোকা। এই অনুষ্ঠানে বিশ্বের সব অদ্ভুত আর অসাধারণ ঘটনা দেখানো হতো। খুব শীঘ্রই, তার মাথায় চেপে বসে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম তোলার ভূত।
তিনি সিএনএন-কে বলেন, "আমি বিশ্বের দ্রুততম মানুষ, সবচেয়ে লম্বা, সবচেয়ে শক্তিশালী—এই রেকর্ডধারীদের দেখে অবাক হতাম। যাদের চুল বা নখ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা, তাদের দেখেও আশ্চর্য হতাম।"
কিন্তু তিনি শীঘ্রই বুঝতে পারলেন যে, "কোনো বিশেষ প্রতিভা ছাড়া একজন সাধারণ মানুষ" হিসেবে রেকর্ড ভাঙা তার কম্ম নয়। তাই তিনি বেছে নিলেন এক অভিনব পথ—বিশ্বের দীর্ঘতম নামটি তৈরি করা!
নামের পেছনে যত গল্প
ওয়াটকিন্স তার নতুন নাম ঠিক করতে প্রায় এক মাস সময় নিয়েছিলেন। একজন টাইপিস্টকে ৪০০ নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় ২৩,০০০ টাকা) দিয়েছিলেন কাগজে নামটি টাইপ করার জন্য। তিনি ল্যাটিন এবং পুরনো ইংরেজি নাম, বিখ্যাত ব্যক্তি, তিনি যেখানে কাজ করতেন সেই অকল্যান্ড লাইব্রেরির 'আপনার শিশুর নাম রাখুন' বই এবং মাওরি অভিধান থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন।
যদিও তার কোনো মাওরি সাংস্কৃতিক যোগসূত্র নেই, ওয়াটকিন্স বলেন, তিনি নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী পলিনেশীয় জনগণের ভাষা যারা বলেন, তাদের পছন্দ করেন। তিনি যোগ করেন, "কিন্তু তাদের নামগুলো বেশ দীর্ঘ হতে পারে, যা আধুনিক কম্পিউটারের আগের যুগে টাইপরাইটারে লেখাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।"
তার নামের তালিকায় আরও ছিল 'লাভ', 'ফ্লোরেন্স' এবং ব্রিটিশ টিভি পাপেট ফক্স 'ব্যাসিল ব্রাশ'-এর নাম। বন্ধুদের পরামর্শে কিছু সামোয়ান নাম, তিনটি জাপানি নাম এবং দুটি চীনা নামও যোগ করেন। এমনকি ১৯৮৪ সালের অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী মার্কিন জিমন্যাস্ট মিচ গেলর্ডকে সম্মান জানাতে তিনি 'গেলর্ড' নামটি যুক্ত করেন। ওয়াটকিন্স বলেন, "তিনি খুব সুদর্শন ছিলেন, তাই আমি তার পদবিটা চুরি করে নিয়েছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমার প্রিয় নামটি হলো 'AZ2000', যার মানে হলো আমার A থেকে Z পর্যন্ত ২,০০০-এরও বেশি নাম রয়েছে।"
সরকারের সাথে আইনি লড়াই
ছয় পৃষ্ঠাজুড়ে টাইপ করা নামটি নিয়ে ওয়াটকিন্স ১৯৯০ সালে নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার জেনারেল তাকে সাফ না করে দেন। ওয়াটকিন্সও নাছোড়বান্দা! তিনি মামলাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হন, কারণ সেই সময়ে সরকারের কাছে তার নাম পরিবর্তন আটকানোর কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না।
অবশেষে, ১৯৯২ সালে তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সনদ পান। গত মাসে, এই রেকর্ডটি "বিশ্বের দীর্ঘতম ব্যক্তিগত নাম" হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি পেয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনের বিড়ম্বনা
সাধারণ ব্যবহারের জন্য, তিনি এখন তার নাম ছোট করে 'লরেন্স অ্যালন অ্যালয় ওয়াটকিন্স' লেখেন। কিন্তু তার জন্ম সনদে পুরো নামটি লিখতে সাত পৃষ্ঠা লেগেছে আর তার মূল পাসপোর্টে ছয়টি অতিরিক্ত পৃষ্ঠা যোগ করতে হয়েছিল!
তিনি বলেন, "ডিজিটাল পাসপোর্টে আমার ছোট নামটিই থাকে, আর লেখা থাকে যে আমার আরও ২,২৪৯টি নাম রয়েছে।"
বন্ধ হলো দীর্ঘ নামের দরজা
ওয়াটকিন্সের এই কাণ্ডের পর নিউজিল্যান্ড সরকার নড়েচড়ে বসে। তারা আইন পরিবর্তন করে দীর্ঘ নাম রাখার এই পথটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে, সেখানে ৭০ অক্ষরের বেশি দীর্ঘ নাম রাখা যায় না। আইসল্যান্ড, জাপান, পর্তুগাল, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের মতো আরও অনেক দেশেই নাম রাখার বিষয়ে এমন কঠোর নিয়ম রয়েছে।
লরেন্সের নামটি হলো:
লরেন্স, এলন, অ্যালয়েস, অ্যালয়সিয়াস, অ্যালফেজ, অ্যালান, অ্যালিউরড, অ্যালউইন, অ্যালিস্যান্ডার, অ্যামবি, অ্যামব্রোজ, অ্যামব্রোসিয়াস, অ্যামিয়াস, অ্যামিয়ো, অ্যামিয়াস, অ্যান্ডার্স, অ্যান্ড্রে, আন্দ্রেয়া, আন্দ্রেয়াস, অ্যান্ড্রু, অ্যান্ডি, আনেইরিন, অ্যাঙ্গুইশ, আনলেইফ, অ্যানথিন, অ্যান্থনি, আন্টোনিও, অ্যাঙ্গাস, অ্যাকোব, আর্চ, আর্চিবাল্ড, আরিনওয়াল্ড, আরিনউল্ফ, আর্ন, আর্নল্ড, আর্নলফ, আর্টার, আরথেন, আরথগেন, আর্থার, আর্থোরিয়াস, আসগেইর, অসমুন্দর, ওবারন, ওবার্ট, ওব্রি, অগাস্ট, অগাস্টিন, অগাস্টাস, অস্টিন, ওভরে, অ্যাভেরে, অ্যাভেরি, অস্টিন, এলব্রিখ্ট, এলমার, এলউইন, আইমি, বালদাসারে, বালদাভিন, বাল্ডেউইন, বালতাসার, বালথাসার, ব্যানার্জি, বার্নাবাস, বার্নাবি, বার্নার্ড, বার্তেলেমিউ, বারথেলেমি, বারথোলোমিউ…………..( এরপরে নামটির আরও ২১৯৫ টি শব্দ রয়েছে, তবে পুরো নামটি লিখতে গেলে ২০ মিনিট সময় লেগে যাবে তাই আপাতত ইতি টানা হলো ! )
