প্রপাগান্ডা শিল্প! মস্কোয় উত্তর কোরিয়ার চিত্র প্রদর্শনী

রাশিয়ার মস্কো শহরের একটি জাদুঘরে উত্তর কোরিয়ার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী দেখতে গেছেন এক নারী। এটি উত্তর কোরিয়ার বাইরে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় শিল্প প্রদর্শনী বলে দাবি করা হচ্ছে। এই প্রদর্শনীকে দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার সর্বশেষ নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করছে, পশ্চিমা বিশ্বের [যাকে তারা 'শত্রুভাবাপন্ন' বলে মনে করে] বিরোধিতার মুখে দুই দেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

প্রদর্শনীতে ১০০টিরও বেশি চিত্রকর্ম ও অন্যান্য শিল্পকর্ম রয়েছে। এর অনেকগুলো সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার (স্যোশালিস্ট রিয়েলিজম) কথা মনে করিয়ে দেয়।

কিছু চিত্রকর্মে ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের যুদ্ধদৃশ্য অঙ্কিত হয়েছে। এটি যেন পিয়ংইয়ংয়ের পছন্দের ইতিহাসের বয়ানকেই প্রতিফলিত করে।

এছাড়া কিছু ছবিতে দেখা যায়, সোভিয়েত ধাঁচের বহুতল ভবনের সামনে সুখী পরিবার দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলোকে 'বিলাসবহুল বাসস্থান' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কোথাও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের দৃশ্য, আবার কোথাও হাস্যোজ্জ্বল কৃষকদের ফসল কাটার ছবি দেখা যায়।

এই গ্রীষ্মে প্রায় তিন দশক পর মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগও। ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এই রেলপথকে রাশিয়া বিশ্বের দীর্ঘতম সরাসরি রেলপথ হিসেবে দাবি করেছে।

বিগত কয়েক মাস ধরে পশ্চিম রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হটাতে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ভূমিকা গোপন রেখেছিল রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া। কিন্তু এখন সেটি দুই দেশের পারস্পরিক ও প্রকাশ্য গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। মস্কোর প্রদর্শনীর মন্তব্য বইয়ে এক দর্শক লিখেছেন, 'কুর্স্কের মাটি মুক্ত করতে আমাদের উত্তর কোরিয়ান ভাইদের কৃতিত্বের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।'

ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে, রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে প্রায় ১৪ হাজার উত্তর কোরিয়ান সেনার মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি হতাহত হয়েছে।

একজন নারী দর্শক বলেন, প্রদর্শনীটি তার উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এর আগে দেশটি সম্পর্কে তার ধারণা ছিল সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রচলিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, 'যে কোনো দেশ যদি তার অবস্থান ধরে রাখে এবং নিজের স্বার্থ রক্ষা করে, তাহলে সেটি আমার কাছে শ্রদ্ধার যোগ্য।'

'আর্ট এক্সহিবিশন ডিপিআরকে: আ কান্ট্রি অব গ্রেট পিপল'- শিরোনামের প্রদর্শনীটি মস্কোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রাশিয়ার মিউজিয়াম অব ডেকোরেটিভ আর্টসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দর্শনার্থীরা সেখানে উত্তর কোরিয়ার শিল্পকর্ম দেখতে আসছেন। পাশাপাশি, এখন কিছু রাশিয়ান পর্যটকও নিয়ন্ত্রিত ভ্রমণ দলের অংশ হয়ে উত্তর কোরিয়ায় ছুটি কাটানোর জন্য যাচ্ছেন।