যে কারাগারে ছিলেন কার্লোস দ্য জ্যাকেল, সেখানেই রাখা হবে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজিকে

লিবিয়া থেকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অবৈধভাবে তহবিল সংগ্রহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি। এই রায়ের পর এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকে কোন কারাগারে রাখা হবে।
যদিও ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো বলছে, প্যারিসের ঐতিহাসিক লা সান্তে কারাগারই হতে পারে তার সম্ভাব্য ঠিকানা। এই কারাগারেই একসময় কুখ্যাত জঙ্গি কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং পানামার সাবেক স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল নোরিয়েগাকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
কারারক্ষী ইউনিয়নের প্রতিনিধি উইলফ্রিড ফঙ্ক বলেন, 'সারকোজির মতো একজন হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির জন্য এই কারাগারটিই সবচেয়ে উপযুক্ত।' তিনি জানান, লা সান্তে কারাগারে 'ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের' জন্য একটি বিশেষ শাখা রয়েছে, যা 'ভিআইপি কোয়ার্টার' নামে পরিচিত। অতীতেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। সারকোজির সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হওয়া তার সাবেক সহযোগী ক্লদ গুয়েন্তকেও এই শাখাতেই রাখা হয়েছিল।
ভিআইপি শাখায় বন্দীদের সাধারণত তিনজনের সেলের পরিবর্তে একা একটি সেলে রাখা হয়। নিরাপত্তার কারণে কারাগারের বাইরের খোলা জায়গায় হাঁটার সময়ও তাদের একা রাখা হয়। তবে ফঙ্ক জানিয়েছেন, এই বিশেষ সুবিধা ছাড়া কারাগারের অন্য অংশের চেয়ে এখানকার পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো নয়। সেলগুলো সাধারণত ৯ থেকে ১২ বর্গমিটারের (১০০-১৩০ বর্গফুট) হয়ে থাকে।
সেলের ভেতরে যেসব সুবিধা পাবেন সারকোজি
ইন্টারন্যাশনাল প্রিজন অবজারভেটরির ফরাসি শাখার কর্মকর্তা জুলিয়েন ফিশমেইস্টার জানান, লা সান্তে কারাগারটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে, তাই এর ভেতরের পরিবেশ অন্যান্য অনেক কারাগারের চেয়ে উন্নত। সংস্কারের পর এখন প্রতিটি সেলেই ব্যক্তিগত শাওয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে।
সারকোজি টেলিভিশন দেখার সুযোগও পাবেন, তবে এর জন্য তাকে প্রতি মাসে ১৪ ইউরো ভাড়া গুনতে হবে। সেলে একটি ল্যান্ডলাইন টেলিফোনও থাকবে। তাকে কারাগার থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে। তবে বন্দীরা চাইলে কারাগার থেকে পণ্য কিনে সেলের ভেতরে নিজের খাবারও তৈরি করতে পারেন।
ফিশমেইস্টার বলেন, 'আমরা কারও জন্যই কারাগার কামনা করি না। তবে একটি বিষয়কে সাধুবাদ জানাতেই হয় যে, এবার এমন এক ব্যক্তিত্ব কারাগারে যাচ্ছেন, যিনি সমাজের এমন এক স্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা সাধারণত কারাগার এড়িয়ে চলেন।'
একসময় দাঙ্গাবাজ তরুণদের 'আবর্জনা' আখ্যা দিয়ে উচ্চচাপের জলকামান দিয়ে তাদের 'পরিষ্কার' করার হুমকি দিয়েছিলেন সারকোজি। অপরাধ দমনে কঠোর নীতির জন্য পরিচিত এই সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য কারাগারের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা হবে।
ফ্রান্সের অনেক কারাগারের মতোই লা সান্তে কারাগারেও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে। বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাস পর্যন্ত এই কারাগারে ১,২৪৩ জন বন্দী ছিল, যদিও এর আনুষ্ঠানিক ধারণক্ষমতা মাত্র ৬৫৭ জনের।
সারকোজির রাজনৈতিক শিষ্যদের একজন, বর্তমান বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন, দুর্ধর্ষ বন্দীদের জন্য কারাগারের পরিস্থিতি আরও কঠোর করার সরকারি উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশের ভাষ্যমতে, বন্দীরা কারাগারের ভেতরে চোরাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা চালায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর হামলার নির্দেশ দেয়। এমনকি তারা ড্রোনের মাধ্যমে সেলে কাবাব ও সুশির মতো খাবারও আনিয়ে নেয়, যার প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন অনলাইন ভিডিও এবং কারা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে।
চলতি বছরের শুরুতে দেশজুড়ে কারাগারগুলোতে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, 'ফ্রেঞ্চ প্রিজনার রাইটস' নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের সদস্যরা ফ্রান্সের বন্দীদের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য এই হামলাগুলো পরিচালনা করেছিল।