উত্তপ্ত লাদাখ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই জেলায় কারফিউ জারি
ভারতের লাদাখে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অঞ্চলটির প্রধান দুই জেলা লেহ ও কারগিলে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবারের ওই সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ আহত হন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লেহ ও কারগিলে পাঁচজনের বেশি সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় রাস্তায় শত শত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার লেহ শহরে মিছিল ঠেকাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের উদ্দেশে ইটপাটকেল ছোড়ে। এসময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর গাড়ি, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির স্থানীয় কার্যালয় ও কিছু সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসিন্দারা জানান, পুলিশের গুলিবর্ষণ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।
২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করে ভারত সরকার। কাশ্মীরে ভিন্নমত দমন করা হলেও লাদাখে রাজনৈতিক অধিকারের দাবি বরং বেড়েছে।
স্থানীয়রা ভূমি ও কৃষি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে রাজ্য মর্যাদা ও সংবিধানসিদ্ধ ক্ষমতা দাবি করছে।
স্থানীয় এক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘট থেকে বুধবারের বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ওই ধর্মঘটে অংশ নেওয়া দুই ব্যক্তি অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে। সহিংসতার জন্য জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকের 'উসকানিমূলক বক্তব্য'কে দায়ী করা হয়। ওয়াংচুক গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। চলতি এই সংঘর্ষের পর তিনি অনশন ভাঙেন।
বুধবারের সহিংসতা লাদাখে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের পরিবর্তনকে প্রথমে স্বাগত জানালেও পরে ভূমি দখল, ব্যবসায় ক্ষতি ও ভঙ্গুর পরিবেশের ওপর প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা।
লাদাখের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে দিল্লির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আগামী ৬ অক্টোবর আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
পাহাড়ি এ অঞ্চলের বিরল জনবসতি সীমান্ত বিরোধ, বন্যা, ভূমিধস ও খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মুখে রয়েছে। লাদাখের হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা কোটি মানুষের পানির উৎসকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এদিকে, ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে অঞ্চলের সামরিকীকরণ বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশগত দূষণ আরও তীব্র হয়েছে।
