পোল্যান্ডে রাশিয়ান ড্রোন: মস্কো বলছে, দেশটিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কোনো পরিকল্পনা নেই

গত মঙ্গলবার রাতভর ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ১৯ বার রাশিয়ান ড্রোনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পূর্বাঞ্চলে জস্নোকা গ্রামের কাছে প্রায় অক্ষত অবস্থায় পতিত একটি ড্রোনের ছবিও হাতে এসেছে বিবিসির। এই ড্রোনের বিষয়ে তিনজন সামরিক বিশ্লেষকের কাছে জানতে চায় গণমাধ্যমটি। তারা জানিয়েছেন, এটি রাশিয়ার গারবেরা নামক ড্রোন– যেটি আকাশপথে শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধোঁকা দিতে 'ডিকয়' হিসেবে ব্যবহার করে থাকে মস্কো। খবর বিবিসির।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিমানের তুলনায় এ ধরনের ড্রোন তুলনামূলক সস্তা হওয়ায়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিমান হামলা পরিচালনার আগে ক্রেমলিন এটি প্রায়ই ব্যবহার করে থাকে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিবিলিন- এর প্রধান নির্বাহী জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, এটি ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য ধরনের ড্রোনের আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা বা সেগুলো সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার হার বাড়ানো হয়।
তিনি জানান, মস্কো সাধারণত ইউক্রেনের সেনা বা শহরগুলোর ওপর হামলার সময় শাহেদ বা গেরান-২ ড্রোনের সঙ্গে গারবেরা ড্রোন ব্যবহার করে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক– রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, (পতিত) ড্রোনটিকে অক্ষত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, এর কারণ হতে পারে এটি দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে, অর্থাৎ পোল্যান্ডের কোনো যুদ্ধবিমান বা সেখানে মোতায়েন ন্যাটোর কোনো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটি ভূপাতিত করেনি।
উভয় বিশেষজ্ঞই মনে করেন, যে ব্যাপক পরিসরে এসব ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছে, তার অর্থ হলো রাশিয়া ইচ্ছেকৃতভাবেই এগুলোকে পাঠিয়েছে।
ক্রাম্পের মতে, ন্যাটো বা পোল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করা যাবে এমন প্রত্যাশায় মস্কো সেগুলোকে নজরদারির জন্য পাঠাতে পারে। এভাবে ড্রোন পাঠানোর মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো কীভাবে পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া জানায় সেটি যাচাই করাও ছিল মস্কোর উদ্দেশ্য।
এঘটনায় পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পোল্যান্ড এখন সবচেয়ে বড় সংঘাতের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তিনি বলেন, "আমি বলছি না যে আমরা যুদ্ধের কাছাকাছি আছি, তবে একটি সীমা অতিক্রম করা হয়েছে। আর এটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি বিপজ্জনক।"
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গতরাতে পশ্চিম ইউক্রেনের সামরিক শিল্পকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা পরিচালনা করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। তবে পোল্যান্ডের কোনো স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য ছিল না বলেও দাবি করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পোলান্ডে অনুপ্রবেশ করা রাশিয়ান ড্রোনগুলোর পাল্লা ৭০০ কিলোমিটারের বেশি ছিল না। এরপরেও আমরা বিষয়টি নিয়ে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
অর্থাৎ, মস্কো বিষয়টি অস্বীকার করেনি এবং একইসঙ্গে ওয়ারশ'র সঙ্গে এনিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।