নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভ: আন্দোলনকারীদের পাশে রূপালি পর্দার তারকারা

নেপালের জেন-জি প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারি বিধিনিষেধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোমবার সকালে রাজপথে নেমেছে । আর তাদের এই আন্দোলনে পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশের প্রথম সারির শিল্পী ও তারকারা।
জনপ্রিয় অভিনেতা মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ ও হরি বংশ আচার্য ফেসবুকে খোলাখুলি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।
হরি বংশ আচার্য সম্প্রতি তৈরি হওয়া একটি রাস্তার বেহাল দশার দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "করদাতাদের টাকায় তৈরি দেশের পরিকাঠামো এত দ্রুত ভেঙে পড়ে কেন?" তিনি লিখেছেন, "আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতাম আর ভাবতাম, কী দ্রুত এটা নষ্ট হয়ে গেল! কিন্তু আজকের তরুণরা শুধু ভাবে না – তারা সরাসরি প্রশ্ন তোলে: কেন ভাঙল? কীভাবে? কে এর জন্য দায়ী? এটা তো শুধু একটা উদাহরণ, এমন হাজারো প্রশ্ন এই প্রজন্ম ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমরা আজ যে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শুনছি, তা কোনো সিস্টেমের বিরুদ্ধে নয়, বরং এই সিস্টেমের দায়িত্বে থাকা নেতা ও কর্মকর্তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে।"
তিনি দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নিজেদের কাজের মান উন্নত করতে এবং তরুণ প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে, কারণ আজকের যুবসমাজ আরও বেশি জবাবদিহিতা চায়।
মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠও একই সুরে কথা বলেছেন, লিখেছেন, "আমি দেশের প্রতিটি যুগ দেখেছি, এর প্রতিটি সংগ্রামকে কাছ থেকে অনুভব করেছি। দেখেছি কীভাবে কণ্ঠস্বর দমন করা হয়েছে, স্বজনপ্রীতি আর পক্ষপাতিত্ব জেঁকে বসেছে, আর ক্ষমতার লোভ লাগামহীন হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। দুর্নীতির বিষ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মনে হয় মা নেপালও যেন নীরবে কাঁদছে। এই তরুণরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের স্বপ্নই নেপালের স্বপ্ন। বছরের পর বছর ধরে চলা স্থবিরতা প্রতিটি নাগরিককে হতাশায় ডুবিয়েছে। এটাই আজকের জেন-জির কণ্ঠ। তাদের কথা শুনতে হবে! দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, এমন নেতা দরকার যারা সাধারণ মানুষের চাহিদা বোঝেন, তবেই জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।"
জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা প্রকাশ সাপুত্র দুই ভাই সুনীল ও শচীনকে আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি তাদের প্রত্যেককে তার গত মাসের ইউটিউব আয় থেকে ২৫,০০০ নেপালি রুপি পাঠিয়েছেন। তিনি এই টাকা দিয়ে আন্দোলনের কর্মীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ক্লান্ত না হতে তাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
অভিনেতা ও পরিচালক নিশ্চল বাসনেটও টিকটকের মাধ্যমে তার সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি তীব্র সমালোচনা করেছেন যে কীভাবে রাজনৈতিক নেতারা একবার ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষকে ভুলে যান এবং তাদের দমনের জন্য নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, অতীতের ব্যক্তিগত উদ্যোগে হওয়া বিক্ষোভের থেকে এবারের বিক্ষোভ আলাদা। এবার নেপালের তরুণরা নিজেরাই তাদের ভবিষ্যতের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়াজ তুলছে। তিনি পুলিশকেও অনুরোধ করেছেন বিক্ষোভের সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে।
অভিনেত্রী কেকি অধিকারী একটি কাব্যিক পোস্টের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করেছেন, যা আন্দোলনের প্রতি তার গভীর সংবেদনশীলতা তুলে ধরে:
নাহোস কুনাই চুলহা চিসা
[কোনো চুলা যেন ঠাণ্ডা না হয়, জীবন থাকুক উষ্ণ]
আগো নিলেয়রা উঠনু
[ভেতরের আগুনকে জ্বালিয়ে ওঠো, বুকভরা সাহস নিয়ে]
পাসিনা আফনাই মাটো লাই
[নিজের মাটির জন্য ঘাম ঝরাও, দেশ তোমার শক্তি]
মুঠি কাসেরা উঠনু
[ঐক্যবদ্ধ হয়ে বজ্রমুষ্টিতে দাঁড়াও, সংকল্পে অবিচল]
অভিনেত্রী বর্ষা রাউত কাঠমান্ডুর বাইরে থাকলেও টিকটকের মাধ্যমে তার সমর্থন জানিয়েছেন এবং অন্যদের আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছেন। অভিনেতা অনমল কেসি, প্রদীপ খাড়কা, ভোলা রাজ সাপকোটা, বর্ষা শিওয়াকোটি এবং গায়িকা এলিনা চৌহান, রচনা রিমাল, সমিক্ষা অধিকারীসহ আরও অনেক তারকাও এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং সবাইকে এই প্রতিবাদে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের শিল্পীরা এখনও প্রকাশ্যে এই বিক্ষোভের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন।