গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি হয়েছে ইসরায়েল: ট্রাম্প

গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির 'প্রয়োজনীয় শর্তে' রাজি হয়েছে ইসরায়েল—এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি সেই শর্তগুলোর বিস্তারিত প্রকাশ করেননি। খবর বিবিসির।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, 'শান্তি প্রতিষ্ঠায় কঠোর পরিশ্রম করা কাতার ও মিসরের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রস্তাবটি দেওয়া হবে। আমি আশা করি হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে, কারণ এর চেয়ে ভালো আর কিছু তারা পাবে না—পরিস্থিতি কেবল আরও খারাপ হবে।'
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর শুরু হয় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জবাবে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৬ হাজার ৬৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তবে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো হামাস গ্রহণ করবে কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে তিনি 'খুবই কঠোর' অবস্থান নেবেন।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, 'আমি জানি নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, তিনি এটা চান। আমার মনে হয়, আগামী সপ্তাহেই আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাব।'
এদিকে, একইদিনে ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ওয়াশিংটনে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এর আগেই বিবিসিকে এক হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের একটি নতুন চুক্তি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতা বাড়লেও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হলে যুদ্ধ শেষ হবে না। অন্যদিকে হামাস দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
বর্তমানে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি গাজায় অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন ইসরায়েল গাজা সিটির উত্তরে নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেছে। সোমবার গাজা সিটির এক সৈকত ক্যাফেতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এছাড়া, গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে আসার সময় বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন—এমন তথ্য খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এই জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ১৭০টির বেশি এনজিও ও দাতব্য সংস্থা বিবৃতি দিয়েছে। অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাগুলো বলেছে, ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত গুলি চালায়।
তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, হামাসের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে জিএইচএফ প্রয়োজনীয়।
চলতি বছরের মার্চে আগের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ে, যখন ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা শুরু করে। সেই সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, হামাস সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তারা 'পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলা' চালিয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া আগের যুদ্ধবিরতির তিন ধাপের পরিকল্পনা থাকলেও তা প্রথম ধাপের পরই ভেঙে পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জীবিত জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ গাজা প্রত্যাহারের বিষয় ছিল।