বিশ্ব জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাত বাড়ছে, কমছে খ্রিস্টানদের হার: পিউ রিসার্চ সেন্টার

বিশ্ব জনসংখ্যায় ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের অনুপাত বেড়েছে, অন্যদিকে খ্রিস্টধর্মের অনুপাত কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার।
সোমবার (৯ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুসলিম জনসংখ্যার হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাপী ২ হাজার ৭০০টিরও বেশি আদমশুমারি ও জরিপের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ধর্মীয় জণতাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলো খতিয়ে দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে খ্রিস্টানরা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হলেও, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি।
সেই বছর খ্রিস্টানদের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩০ কোটিতে। তবে ধর্মীয় অনুপাতে তা কমে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৮ শতাংশে, যা ১০ বছর আগের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক কনরাড হ্যাকেট বলেন, 'মাত্র ১০ বছরে এত বড় পরিবর্তন সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এ সময়ের মধ্যে মুসলিম ও খ্রিস্টান জনসংখ্যার পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে সব ধর্মের চেয়ে দ্রুত হারে।'
পিউ-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে তাদের অপেক্ষাকৃত কম গড় বয়স—২০২০ সালে মুসলিমদের গড় বয়স ছিল ২৪, যেখানে অন্যান্য অমুসলিমদের গড় বয়স ছিল ৩৩।
এছাড়া কিছু অঞ্চলে মুসলিমদের মধ্যে উচ্চ জন্মহার এবং ধর্মত্যাগের হার অপেক্ষাকৃত কম থাকাও বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
হ্যাকেট বলেন, 'বিশ্বজুড়ে প্রতি একজন নতুন খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণকারীর বিপরীতে তিনজন করে খ্রিস্টান ধর্মত্যাগ করছেন।'
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে খ্রিস্টানদের সর্বাধিক বসবাস সাব-সাহারান আফ্রিকাতে, প্রায় ৩১ শতাংশ। আগে এই স্থানটি ছিল ইউরোপের দখলে।
হ্যাকেট বলেন, 'সাব-সাহারান আফ্রিকায় উচ্চ জন্মহার, তরুণ জনগোষ্ঠী ও সামগ্রিকভাবে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবেই এই পরিবর্তন এসেছে। এর বিপরীতে ইউরোপের জনসংখ্যায় বয়স্ক জনগোষ্ঠী, কম জন্মহার ও ধর্মত্যাগের হার বেশি।'
হ্যাকেট বলেন, 'আমরা মাঝে মাঝে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের কথা শুনি, এবং সেটা নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সম্ভবও হতে পারে। তবে এই ১০ বছরের পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে।'
ধর্মত্যাগের প্রবণতা, বয়স ও জন্মহারের ব্যবধান বিবেচনায় হ্যাকেট ধারণা দেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ইসলাম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মে পরিণত হতে পারে। তবে এই পূর্বাভাস বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের প্রবণতাগুলোর ওপর।