ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান: লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি

লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের মুখে শহরের একটি অংশে কারফিউ জারি করেছেন শহরটির মেয়র ক্যারেন ব্যাস। খবর বিবিসি'র।
মেয়র ব্যাস গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শহরের ডাউনটাউন এলাকার এক বর্গমাইল অংশে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৩টা থেকে দুপুর ১টা) কারফিউ কার্যকর থাকবে।
তবে কর্মস্থলে যাতায়াত, জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ বা প্রদান, এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই কারফিউয়ের আওতার বাইরে থাকবেন।
ব্যাস জানান, সহিংসতায় এরইমধ্যে ডজনখানেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, 'গতরাতে ২৩টি দোকানে লুটপাট হয়েছে। শহরের বিভিন্ন ভবনে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ব্যবসা ও সম্পত্তির। তাই আমি অনুরোধ করব, যারা ডাউনটাউনে থাকেন না বা কাজ করেন না, তারা যেন ওই এলাকায় না যান। কারফিউ ভাঙলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মেয়র জানান, কারফিউ কয়েকদিন বলবৎ থাকতে পারে। তবে এটি শহরের ৫০২ বর্গমাইলের মধ্যে মাত্র ১ বর্গমাইলে সীমিত।
তিনি বলেন, 'ডাউনটাউন এলাকায় সহিংসতা ও ভাঙচুর গুরুতর হলেও পুরো শহরে পরিস্থিতি এমন নয়।'
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও সেনা মোতায়েনের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে পাঁচদিন ধরে বিক্ষোভ চলমান। একই সঙ্গে নিউইয়র্ক, শিকাগো ও আটলান্টাসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েনও জোরদার করা হয়েছে। শনিবার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসী ধরপাকড়ের পর বিক্ষোভ শুরু হলে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ডদের সক্রিয় করেন। এরপর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস এর তথ্যমতে, বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় ২ হাজার ১০০ সদস্য এবং ৭০০ মেরিন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ার ট্রাম্পের এটি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, 'ট্রাম্প শহরের পরিস্থিতি আরও উসকে দিচ্ছেন।'
অপরদিকে, ট্রাম্প বিক্ষোভকে 'শান্তি ও জনশৃঙ্খলার ওপর আক্রমণ' হিসেবে অভিহিত করে লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ক্যালিফোর্নিয়া সরকার বলছে, সেনা মোতায়েন নিয়ে তাদের আগাম কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বলেন, 'বিক্ষোভ থামাতে হলে আগে অভিবাসন অভিযান বন্ধ করতে হবে।' তিনি এ নিয়ে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছেন।
নিউজমের মতে, হোয়াইট হাউস ক্যালিফোর্নিয়াকে এক ধরনের অবরোধের মধ্যে ফেলেছে। প্রেসিডেন্টের এমন নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর দেশজুড়ে উত্তাল প্রতিবাদের সময় লস অ্যাঞ্জেলেসে রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তখনও বিক্ষোভকারীরা কারফিউ উপেক্ষা করে মিছিল চালিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশের সহিংস ব্যবহারের জন্য তখন এলএপিডি (লস এঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট) সমালোচিত হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও রাতের বেলা আংশিকভাবে জনসমাগম ও ব্যবসা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভয়াবহ দাবানলে হাজারো ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার পর লুটপাট ঠেকতে কারফিউ জারি করা হয়। তখন ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হলেও তা মেয়রের অনুরোধেই হয়েছিল। তবে এবার তা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।