ভারতের ওপর পাকিস্তানের পাল্টা জবাব কি এখন অবশ্যম্ভাবী?

বুধবার (৭ মে) ভোরে পাকিস্তানে ভারতের হামলার পর দুইদেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের হামলার আগে দেশজুড়ে যুদ্ধের উন্মাদনা তেমন না থাকলেও পরিস্থিতি যেকোনো সময়ে দ্রুত বদলে যেতে পারে।
বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামাবাদভিত্তিক বিশ্লেষক ও জেন'স ডিফেন্স উইকলির সাবেক সংবাদদাতা উমর ফারুক বলেন, "আমাদের রাজনৈতিক সমাজ এখন ভীষণভাবে বিভক্ত। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান কারাগারে। তার কারাবন্দিত্ব সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনমনে প্রবল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।"
"২০১৬ বা ২০১৯ সালের তুলনায় আজকের দিনে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি অনেক কম আগ্রহী—সাধারণত যে যুদ্ধ-উন্মাদনা দেখা যায়, তা এবার স্পষ্টভাবেই অনুপস্থিত। তবে যদি মধ্য পাঞ্জাবে জনমত বদলে যায়—যেখানে ভারতবিরোধী মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি—তাহলে সেনাবাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের চাপ বাড়তে পারে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আর এই সংঘাতের মাধ্যমেই সেনাবাহিনী ফের জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে পারে," যোগ করেন তিনি।
পাকিস্তানের লাহোরভিত্তিক রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক ড. ইজাজ হুসাইনও প্রায় একই কথা বললেন।
তিনি জানালেন, "ভারতের সঙ্গে বর্তমান উত্তেজনা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য একটি সুযোগ হতে পারে—জনসমর্থন পুনরুদ্ধারের, বিশেষ করে নগর এলাকার মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে, যারা সম্প্রতি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগে সেনাবাহিনীর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।"
"প্রচলিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীর সক্রিয় প্রতিরক্ষা অবস্থান ইতোমধ্যেই জোরালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি, কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ছয় বা সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানি বাহিনী।"
"এই দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। তবে এগুলো এমন এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি শক্তিশালী করছে, যারা সাধারণত কোনো বিদেশি হুমকির সময়ে জাতীয় প্রতিরক্ষা বয়ানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে," বলেন তিনি।
এর আগে, বুধবার ভোরে কাশ্মীরসহ পাকিস্তানের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানায় ভারত। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হন, এবং পাল্টা পদক্ষেপে অপরপক্ষে ভারতে নিহত হন ১৫ জন।
গত মাসে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেই মূলত বুধবার এই হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ৭ মে মধ্যরাতের পর আকাশে উড়ে যাওয়া ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান তারা ভূপাতিত করেছে।