ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়াবে

কাশ্মীর ইস্যু ঘিরে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত ও উত্তেজনা বাড়তেই থাকলে— তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের সংঘাতের ফলে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে চাপে পড়তে পারে—বিশেষত আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম সার্ক আরও অচল হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ: উত্তেজনার কেন্দ্রে
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভারতঘনিষ্ঠ শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক আদর্শে গভীরভাবে বিভক্ত সমাজ ও দেশকে পরিচালনার চেষ্টা করছে এ সরকার।
এরমধ্যে ভারতের প্রতি জনমনে বিরূপ মনোভাবও বাড়ছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ এবং ভারতীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগের কারণে।
ভোটের ম্যান্ডেট না থাকা এই অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে জনগণের জাতীয়তাবাদী চাপের মুখে, অন্যদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক প্রত্যাশার চাপে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হিমশিম খাবে।
শ্রীলঙ্কা: সতর্ক নিরপেক্ষতা ও অভ্যন্তরীণ চাপ
শ্রীলঙ্কা প্রকাশ্যে হয়তো নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে, তবে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে নীরবে সমর্থন দিতে পারে কলম্বো।
কিন্তু, কাশ্মীর ইস্যু মুসলিম নিপীড়নের প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত হলে, দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে, যা এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
নেপাল: ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় কূটনৈতিক চাপে
নেপাল হয়তো ভারত–চীন ভারসাম্য নীতিই অনুসরণ করবে, তবে সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধ ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্কের কারণে ভারত কাঠমান্ডুর নিরপেক্ষতাকে সন্দেহের চোখে দেখবে।
নেপালের অনেক নাগরিক ভারতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, যা দিল্লির প্রতি একটি অর্থনৈতিক নির্ভরতা তৈরি করে। এটি ভারতের কূটনৈতিক চাপের হাতিয়ার হতে পারে।
ভুটান ও মালদ্বীপ: কৌশলগত দ্বিধা
ভুটান ভারতের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র, তাই দেশটি ভারতপন্থী অবস্থান নেবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে ভারতের মনোযোগ অন্যদিকে সরলে— চীন ভুটানের সীমান্তে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, মালদ্বীপে কাশ্মীর ইস্যু ইসলামপন্থী আবেগকে উসকে দিতে পারে। একইসঙ্গে ভারত মহাসাগরে সামরিক উত্তেজনা বাড়লে মালদ্বীপের "হেজিং স্ট্র্যাটেজি" আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যাহত হবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগ
ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হলে এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেও। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর চীনের মোকাবেলায় আঞ্চলিক ভারসাম্য তৈরির নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু, একটি দীর্ঘমেয়াদি সীমান্ত উত্তেজনা ভারতের মনোযোগ সমুদ্রভিত্তিক কৌশল থেকে সরিয়ে— পশ্চিম সীমান্তে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। ফলে কোয়াড-এর মতো প্ল্যাটফর্মেও ভারতের সক্রিয়তা ব্যাহত হতে পারে। এটি ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকেই বাধাগ্রস্ত করবে।