এবার পাকিস্তানের বন্দরে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান নিজেদের সব বন্দরে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে ভারতের পক্ষ থেকেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানের বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, 'পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামুদ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলো পাকিস্তানি বন্দরগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে না, একইভাবে পাকিস্তানি জাহাজগুলোও ভারতের বন্দরে যেতে পারবে না। তবে কোনো ব্যতিক্রম হলে তা 'কেস বাই কেস' ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
এর আগে শনিবার ভারত জানায়, পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে আর ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটন এলাকায় ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারায় ২৬ জন, যাদের অধিকাংশই পর্যটক। এটি ২০০০ সালের পর অন্যতম ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হামলার পেছনে সীমান্তপারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত, যদিও তা প্রমাণ করতে পারেনি। পাকিস্তান বরাবরের মতোই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পাকিস্তান সীমান্তে বাড়িয়েছে সেনা মোতায়েন, অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দিয়েছে 'অপারেশনাল ফ্রিডম'। ৩০ এপ্রিল পাকিস্তান আশঙ্কা প্রকাশ করে যে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় হামলা হতে পারে—এমন প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক যোগাযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুই দেশ।
পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের ওপর একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে উৎপন্ন বা সে দেশ হয়ে আসা সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে আগত ডাক ও পার্সেল বিনিময়।
ভারতের পররাষ্ট্র বাণিজ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নিষেধাজ্ঞাটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে। এতে বলা হয়, 'জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
ভারতের এসব পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটি সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করা, ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তবে এক ধরনের মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান এই সপ্তাহে ভারতে রপ্তানির জন্য আটকে থাকা ১৫০টি আফগান ট্রাককে ওয়াঘা সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দিয়েছে, জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, ভারতীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পাকিস্তান থেকে আসা সব ধরনের ডাক ও পার্সেল—বিমান ও স্থলপথে—পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এই তথ্য ভারতীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিজেও এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন।
দুই দেশের ডাক যোগাযোগ আগে থেকেই টানাপোড়েনে ছিল। ২০১৯ সালের আগস্টে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে পাকিস্তান ডাক পরিষেবা বন্ধ করে দেয় এবং নভেম্বর মাসে তা আবার চালু করে। তবে পার্সেল সেবাটি আর চালু হয়নি বলেই জানায় এএনআই নিউজ।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, তার অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এবং সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআরের ইউটিউব চ্যানেল ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পেহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত এ পর্যন্ত বহু পাকিস্তানি ক্রিকেটার, অভিনেতা, গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে। ভারতে এসব অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বার্তা দেখা যাচ্ছে—'এই অ্যাকাউন্টটি ভারতে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি আইনি অনুরোধের কারণে এই কন্টেন্ট সীমিত করা হয়েছে।'
এদিকে, ভারতের 'মিথ্যা প্রচারণা' প্রতিহত করতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, শনিবার ও রবিবার সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
তথ্যমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, 'ভারত মিথ্যা ও ভিত্তিহীনভাবে নিয়ন্ত্রণরেখার পাশে সন্ত্রাসী ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। এই সফরের মাধ্যমে তাদের সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণ করা হবে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের যেকোনো রূপের ঘোর বিরোধী এবং বিশ্বজুড়ে শান্তির পক্ষে অটল। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।