ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর 'পারস্পরিক শুল্ক' ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক রিভিউ করছে।
এদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে প্রস্তাবিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক কার্যকরের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি।
এ বিষয়ে ভিয়েতনামের নেতা তো লাম শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
ফোনালাপের বিষয়ে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, 'ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি তো লামের সঙ্গে এইমাত্র একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ফোনালাপ হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, ভিয়েতনাম যদি আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করতে সক্ষম হয় তবে তারা তাদের শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়।'
ট্রাম্প আরও লেখেন, 'আমি আমাদের দেশের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং বলেছি, আমি অদূর ভবিষ্যতে একটি বৈঠকের অপেক্ষায় আছি।'
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা একটি নথি অনুসারে, ভিয়েতনাম আগামী সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিনিধি দলটি একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, যার আওতায় ভিয়েতনামের একটি বিমান সংস্থা বোয়িংয়ের বিমান কিনবে।
রয়টার্স আরও জানিয়েছে, দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, 'তারা শিগগিরই শুল্ক ইস্যুতে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে' আলোচনা চালিয়ে যাবেন। ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, ট্রাম্প শিগগিরই দেশটির সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
এদিকে শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।'
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়া ১৯টি বিভাগের মার্কিন পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে।
এ প্রস্তাবের লক্ষ্য—উভয় দেশের জন্য লাভজনক আলোচনার পথ তৈরি করা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জুতা কোম্পানিগুলোর জন্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কম্বোডিয়ার ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে।
রয়টার্স পর্যালোচিত একটি চিঠিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, 'কম্বোডিয়া আপনার সম্মানিত প্রশাসনের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব সুবিধাজনক সময়ে আলোচনায় বসতে চায়।'
এ ছাড়া ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালের শরৎকালের (ফল) মধ্যে একটি বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ) নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।
চুক্তির লক্ষ্য হলো—বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, শুল্ক ও অ-শুল্ক বাধা কমানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের সমন্বয় আরও শক্তিশালী করা। এসব বিষয়ে চলমান আলোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মার্চে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ওয়াশিংটন সফর করেন।
শুক্রবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত, ভিয়েতনাম ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা আগামী সপ্তাহে কার্যকর হতে যাওয়া শুল্কের প্রভাব কমাতে পারে।
সিএনএন জানায়, বৃহস্পতিবার ১৮০টিরও বেশি দেশের ওপর ব্যাপক শুল্ক ও পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রচেষ্টা কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।