এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় ৩৫০টি ভাল্লুক গুলি করে মারায় সম্মতি স্লোভাকিয়া সরকারের

স্লোভাকিয়ার সরকার দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ ভাল্লুক নিধনের পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভায় ইতোমধ্যে পরিকল্পনাটি পাশ হয়েছে। স্লোভাকিয়ার কেন্দ্রীয় বনাঞ্চল দিয়ে হাটার সময় ভাল্লুকের হামলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এ আদেশ আসে। খবর বিবিসির।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর পপুলিস্ট-জাতীয়তাবাদী সরকার মন্ত্রিসভায় ঘোষণা করেছে, দেশে আনুমানিক ১,৩০০টি বাদামী ভাল্লুক রয়েছে। তাদের মধ্যে সাড়ে ৩০০ ভাল্লুক হত্যা করা হবে। সরকারের দাবি, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মানুষ ভাল্লুকের হামলার শিকার হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করতে পারি না, যেখানে মানুষ বনাঞ্চলে যেতে ভয় পায়।"
ভাল্লুক শিকারের অনুমতি দিতে বিশেষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এ জরুরি অবস্থা দেশটির ৭৯ জেলার মধ্যে ৫৫টি জেলায় ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্রাতিস্লাভার সরকার ইতোমধ্যে আইন শিথিল করে মানুষের বসতির কাছে চলে এলে ভাল্লুক হত্যার অনুমতি দিয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৯৩টি ভাল্লুককে গুলি করে মারা হয়েছিল।
তবে, আরও ভাল্লুক হত্যার পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন এবং অবৈধ হতে পারে।
পরিবেশবিদ ও বিরোধী দল 'প্রগ্রেসিভ স্লোভাকিয়া'র ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মিখাল ভিয়েজেক বলেছেন, "এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।"
তিনি বিবিসিকে বলেন, "পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই সুরক্ষিত প্রজাতির উপর নজিরবিহীন শিকার চালিয়েও ভাল্লুকের আক্রমণ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "নিজেদের এই ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার আরও বেশি ভাল্লুক হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
ভিয়েজেক যুক্তি দিয়েছেন, প্রতি বছর হাজার হাজার ভাল্লুকের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ ঘটে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ইউরোপীয় কমিশন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
স্লোভাকিয়ার পুলিশ বুধবার নিশ্চিত করেছে, গত রবিবার রাতে মধ্য স্লোভাকিয়ার ডেটভা শহরের কাছে একটি বনে এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে ও তিনি ভাল্লুকের আক্রমণে মারা গেছেন।
ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, তার শরীরের ভাল্লুকের আক্রমণের ক্ষত রয়েছে।
৫৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি শনিবার নিখোঁজ হন। তিনি সেদিন বনের ভিতর হাঁটতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) স্লোভাক পত্রিকা 'নোভি কাস'-কে জানায়, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি ভাল্লুকের গুহার চিহ্নও পাওয়া গেছে।
স্লোভাকিয়ায় ভালুকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা বাড়ায়, বিষয়টি এখন রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
২০২৪ সালের মার্চে বেলারুশের ৩১ বছর বয়সী এক নারী উত্তর স্লোভাকিয়ায় ভাল্লুকের ধাওয়া খেয়ে গিরিখাতে পড়ে মারা যান।
কয়েক সপ্তাহ পর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে নিকটবর্তী লিপটোভস্কি মিকুলাস শহরের দিনের আলোতেই একটি ভাল্লুককে দৌড়াতে দেখা যায়। ভাল্লুকটি গাড়ির পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে এবং ফুটপাথে থাকা মানুষদের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
পরে কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে তারা ভাল্লুকটিকে হত্যা করেছে। তবে পরিবেশবিদরা পরে জানান, স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, গুলিবিদ্ধ ভাল্লুকটি মূল ঘটনায় জড়িত ছিল না।
পরিবেশমন্ত্রী টমাস তারাবা বুধবার জানান, স্লোভাকিয়ায় বর্তমানে ১,৩০০-র বেশি ভাল্লুক রয়েছে। ৮০০ ভাল্লুকের সংখ্যা যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন। কারণ ভাল্লুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লোভাকিয়ায় ভালুকের সংখ্যা মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
এ প্রজাতির ভাল্লুক কার্পাথিয়ান পর্বতমালাজুড়ে দেখা যায়। অর্থাৎ রোমানিয়া থেকে পশ্চিম ইউক্রেন হয়ে স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ডে এ ভাল্লুকের দেখা মেলে।