৪০০ বছর পর চিঠি বিতরণ বন্ধ করছে ডেনমার্কের রাষ্ট্রায়ত্ত পোস্টাল সার্ভিস

২০২৫ সালের শেষে সব ধরনের চিঠি বিতরণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডেনমার্কের রাষ্ট্রায়ত্ত পোস্টাল সার্ভিস পোস্টনর্ড। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এ শতাব্দীর শুরু থেকে চিঠির পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমে গেছে। খবর বিবিসি'র।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ৪০০ বছরের পোস্টাল সেবার সমাপ্তি ঘটছে। ডেনমার্কের ১ হাজার ৫০০ পোস্ট বক্স জুন মাসের শুরু থেকে আস্তে আস্তে অদৃশ্য হতে শুরু করবে।
পরিবহণমন্ত্রী থমাস ড্যানিয়েলসেন ডেনমার্কবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনো চিঠি লেনদেন করা যাবে, কারণ 'চিঠি এবং পারসেল উভয়ের জন্যই একটি মুক্ত বাজার রয়েছে।'
ইউরোপজুড়ে পোস্টাল সার্ভিসগুলো চিঠির পরিমাণ কমে আসায় সংকটে পড়ছে। বৃহস্পতিবার জার্মানির ডয়েচে পোস্ট ঘোষণা করেছে, 'সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল পদ্ধতিতে' তারা ৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে।
ডয়েচে পোস্টের ১ লাখ ৮৭ হাজার কর্মী রয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরা জানান, আরও ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।
ডেনমার্কে ৪০০ বছর ধরে একটি বিশ্বব্যাপী পোস্টাল সেবা ছিল, যা ২০২৩ সালের শেষে শেষ হয়েছে। ডিজিটাল মেইল সেবা বৃদ্ধি পাওয়ার পর চিঠির ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
পোস্টনর্ড জানিয়েছে, তারা এখন থেকে পারসেল ডেলিভারির দিকে মনোযোগ দেবে এবং ২০২৬ সালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ২০২৪ সালে বা এই বছর কেনা যে কোনো ডাকটিকিট ফেরত নেওয়া যাবে।
প্রতিষ্ঠানটির ৪ হাজার ৬০০ জন কর্মীর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
ডেনিশ ব্রডকাস্টার ডিআরের সঙ্গে আলাপকালে পোস্টনর্ডের কর্মী অ্যান্ডারস রাউন মিকেলসেন বলেন, 'এটা একটি অত্যন্ত দুঃখজনক দিন। শুধু আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য নয়, বরং ১ হাজার ৫০০ জনের জন্য, যারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।'
ডেনমার্ক বিশ্বের অন্যতম ডিজিটালাইজড দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে প্রায় সবকিছুর জন্য একটি অ্যাপ রয়েছে, খুব কম মানুষই নগদ টাকা ব্যবহার করে; এমনকি ডেনিশরা তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং স্বাস্থ্য কার্ড স্মার্টফোনে বহন করেন।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিল, এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠিপত্র সবই ডিজিটালি পাঠানো হয়।
সরকারি সেবাগুলো ডিজিটাল পোস্ট অ্যাপ বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। পোস্টনর্ড ডেনমার্ক তাই জানিয়েছে, চিঠির বাজার আর লাভজনক নয়।
শতাব্দীর শুরু থেকে ডেনমার্কে চিঠির পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন থেকে ২০২৩ সালে ১১০ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
এই সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে বয়স্কদের। ৯৫ শতাংশ ডেনিশ নাগরিক ডিজিটাল পোস্ট সেবা ব্যবহার করেন। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২ লাখ ৭১ হাজার মানুষ এখনও সরাসরি চিঠির ওপর নির্ভরশীল।
পোস্টনর্ড বছরের পর বছর আর্থিক সংকট মোকাবিলা করেছে এবং গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ঘাটতিতে ছিল।
ডেনিশ এমপি পেলে ড্রাগস্টেড এই পদক্ষেপের জন্য বেসরকারিকরণকে দায় দিয়েছেন এবং অভিযোগ করেছেন, এটি দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে।
২০২৪ সালে একটি নতুন পোস্টাল অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে পোস্টাল সেবা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং চিঠিতে ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় সেটি পোস্ট করার খরচ বেড়েছে।
পোস্টনর্ড ডেনমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিম পেডারসেন স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, 'যখন একটি চিঠির মূল্য ২৯ ডেনিশ ক্রোন (৪.২০ ডলার), তখন চিঠির পরিমাণ কমবে।'
তিনি আরও বলেন, ডেনিশরা ক্রমেই ডিজিটাল হয়ে উঠেছে এবং চিঠির পরিমাণ এমনভাবে কমে গেছে যে গত এক বছরে তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
পোস্টনর্ড-এর সুইডেনেও কার্যক্রম রয়েছে। সেখানে এটি ৪০ শতাংশ ডেনিশ মালিকানাধীন এবং ৬০ শতাংশ সুইডিশ মালিকানাধীন।