গাজা ইস্যুতে নিজ সরকারের পলিসির সমালোচনা করে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বিবৃতি

গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে নিজ দেশের পলিসির সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্তত ৮০০ জন কর্মকর্তা। তাদের দাবি, দেশগুলোর সরকারের বিদ্যমান পলিসির কারনে 'আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন' হতে পারে। খবর বিবিসির।
বিবিসির কাছে বিবৃতিটির একটি অনুবাদকৃত কপি এসেছে। সেখানে বলা হয় যে, তাদের দেশের প্রশাসন 'এই শতাব্দীর অন্যতম মানবিক বিপর্যয়ের' সাথে জড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও উপেক্ষা করেছে।
এক্ষেত্রে এই বিবৃতিটি ইসরায়েলের প্রধান পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সরকারের মধ্যে অসন্তোষের একটি উল্লেখযোগ্য বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর প্রদান করা মার্কিন এক সরকারি কর্মকর্তা ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করেছেন। ওয়াশিংটনের পলিসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, "যারা অঞ্চলটিকে ভালোভাবে বোঝেন তাদের কথায় কান দেওয়া হয়নি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কর্মকর্তা আরও বলেন, "সত্যিটা হচ্ছে, গাজায় আমরা সক্রিয়ভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, অন্য যেকোনো পরিস্থিতি থেকে এটি মৌলিকভাবে ভিন্ন।"
বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইইউ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ প্রায় ১১ টি ইউরোপীয় দেশের বেসামরিক কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, "ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা মানেনি। যার ফলে কয়েক হাজার বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে যাদের হয়তো বাঁচানো যেত। এছাড়াও ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য পৌঁছুতে না দেওয়া, হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে অনাহারে রাখার ফলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ছে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "আমাদের সরকারের নীতিগুলি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ এবং এমনকি জাতিগত নির্মূল বা গণহত্যায় ভূমিকা রাখছে এমন একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে।"
তবে ঠিক কারা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সেটি প্রকাশ করা হয়নি। বিবিসির অনুমান মতে, স্বাক্ষরকারীদের প্রায় অর্ধেকই এমন কর্মকর্তা যাদের প্রত্যেকের সরকারে অন্তত এক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আলজেরিয়া ও সিরিয়ায় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকা অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফর্ড বিবিসিকে বলেন, "একাধিক সরকারের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বেসামরিক কর্মচারীদের সমন্বযয়ের ব্যাপারটিও অভূতপূর্ব। গত ৪০ বছরের পররাষ্ট্রনীতি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় আমি এমনটা দেখিনি।"

রবার্ট ফর্ড এক্ষেত্রে ২০০৩ সালে ইরাক ইস্যুতে মার্কিন গোয়েন্দা ভুল রিপোর্টের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন। তবে এবার বহু কর্মকর্তাই চুপ করে থাকতে রাজি নন বলে মনে করেন তিনি।
ফর্ড বলেন, "গাজা যুদ্ধের সমস্যাগুলো বেশ গুরুতর। তাই তারা সরাসরি কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।"
স্বাক্ষরকৃত কর্মকর্তারা মনে করেন, ইসরায়েলের প্রতি তাদের সরকারের সামরিক, রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সমর্থনের বর্তমান প্রকৃতি 'জবাবদিহিতা ছাড়াই' একদিকে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিচ্ছে। হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের জীবনও বিপন্ন করছে। সেইসাথে ইসরায়েলের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করছে৷
প্রকাশিত বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় যুদ্ধের অবসান দেখতে চায়।
তাদের একজন মুখপাত্র বলেন, "পররাষ্ট্র সচিব যেমনটা বলছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেটি করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে আমরা গাজার বেসামরিক লোকেদের উপর এর প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।"
আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন বলেছে, তারা বিবৃতিটি পর্যালোচনা করছে। মন্তব্যের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান